ডেস্ক রিপোর্ট :
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিচারকদের দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) তিনি এই আহ্বান জানান। বিচারকদের তিনি বলেন, ‘আপনারা আরও সতর্ক থাকবেন, ন্যায়বিচারপ্রত্যাশীদের যাতে দিনের পর দিন আদালত থেকে ফিরে যেতে না হয়।’
মো. সাহাবুদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশের সংবিধান কার্যকর হয় এবং এর আলোকে ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উদ্বোধন করেন।
সুপ্রিম কোর্টকে জাতির গৌরবের প্রতীক এবং সব পেশার মানুষের আস্থার প্রতীক উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, যেখানে তারা ন্যায়বিচার ও অধিকার রক্ষার জন্য আসে।
আইনজীবীরা বিচার ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আইনজীবীদের সহযোগিতা ছাড়া বিচার কার্যক্রম কোনোভাবেই অগ্রসর হতে পারে না।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারিক কাজে বেঞ্চ ও বারের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান প্রণয়নের সময় দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, যখনই প্রয়োজন আইনজীবীরা আদালতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবং অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে তাদের মতামত দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে আদালতকে সহায়তা করেছেন।
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, সংবিধানের হেফাজতকারী এবং চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকারী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে। এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গকে নিষিদ্ধ করতে পারে।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘তবে এই দায়িত্ব অবশ্যই অত্যন্ত যত্ন সহকারে প্রয়োগ করতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় তিনটি অঙ্গ-লেজিসলেটিভ, এক্সিকিউটিভ ও জুডিশিয়ালের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা অত্যন্ত অপরিহার্য।’ তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে সামরিক শাসন জারি করে সংবিধান লঙ্ঘন করে গণতন্ত্রকে চিরতরে হত্যার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু স্বৈরশাসকরা সফল হননি।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘স্বৈরশাসকরা তাদের পতনের আগে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী পাস করার জন্য সংসদকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে তাদের সব অপকর্মকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তা অনুমোদন করেনি।’
সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকার প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক যেকোনো আইনকে খর্ব করতে সুপ্রিম কোর্ট সবসময়ই বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে এবং বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে অভিভাবক হিসেবে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে ঐতিহাসিকভাবে আইনের শাসন নিশ্চিত করেছে।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক কমিটির সভাপতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।