ডেস্ক রিপোর্ট :
ভোটবর্জন, হরতাল, সংঘাত-সংঘর্ষ ও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে জালভোট ও প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল ও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রামে এক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
আজ রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে সারা দেশের ২৯৯টি নির্বাচনি এলাকায় একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৭ শতাংশের মতো। সকাল ৮টায় দিনের শুরুতে রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি করেছে। আমাদের নির্বাচনে এনে কোরবানি দিয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মো. ফয়সাল বিপ্লবের সর্মথকদের বিরুদ্ধে। নিহতের নাম জিল্লুর রহমান (৪০)। নিহতের স্ত্রী রেহেনা বেগম দাবি করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিপ্লবের সমর্থক মিরকাদিম পৌরসভার আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মো. শহিদুল ইসলাম শাহীন ও পৌর কাউন্সিলর মো. লিটনের নেতৃত্বে নৌকা সমর্থক জিল্লুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
এবারের নির্বাচনে সারা দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে ২৯৯টি আসনে। নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী আমিনুল হকের মৃত্যুতে ওই আসনের নির্বাচন বাতিল করেছে ইসি। ফলে ২৮টি রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা জোটের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা।
গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে প্রস্তুতি শুরু করে। একইসঙ্গে স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা নেন প্রস্তুতি। পরে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা শেষ হয় ৩০ নভেম্বর। এরপর যাচাই-বাছাই হয় ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর। এই যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়া অনেক প্রার্থী যান হাইকোর্টে। আবার হাইকোর্টে প্রার্থিতা ফিরে না পেয়ে অনেকে দ্বারস্থ হন আপিল বিভাগে। সব মিলিয়ে আদলতের রায়ে অনেকে ফেরেন নির্বাচনি মাঠে। বিএনপির অবস্থান নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো দুইদিনের হরতাল আহ্বান করেছে। আজ হরতালের দ্বিতীয় দিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, দেশবাসী এ নির্বাচন বর্জন করেছে। কেন্দ্রে কোনো ভোটার যায়নি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে সমাবেশের আয়োজন করে বিপুল নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটায়। ওই সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বিএনপির।
এরপর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার হতে দেখা যায়। দলটির অভিযোগ, বিএনপির ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে ২৮ অক্টোবরের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়—আসামি ছাড়া কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি তারা।
আজ রোববার বিকেলে আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় ২৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশ, খুলনায় ৩২ শতাংশ, সিলেটে ২২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৬ শতাংশ, রংপুরে ২৬ শতাংশ ও বরিশালে ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে। আট বিভাগে গড়ে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত (বিকেল ৩টা) ৭টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে।