ডেস্ক রিপোর্ট :
সূচি অনুযায়ী উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল। এতে করে চাকরিজীবী, পেশাজীবীসহ সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে এ বাহন। এক সময় সকাল-বিকেল অফিস সময়ে মিরপুর, উত্তরায় গাড়িতে ওঠা ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। সেই রুটে এখন উল্টো চিত্র দেখা গেছে। মেট্রোরেলে ভিড় থাকলেও যাত্রীর খরা দেখা দিয়েছে এই রুটের চলাচলকারি বাসগুলোতে। উপরে মেট্রোরেলের বগিগুলো যখন যাত্রীতে পূর্ণ, তখন নিচে সড়কে বাসগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে যাত্রীর জন্য। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে যাত্রীসেবা উন্নয়নে মনোযোগ দেবেন বলে জানান বাস মালিকরা।
আজ রোববার (২১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মিরপুরসহ কয়েকটি স্টেশন পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতি দশ মিনিট পরপর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মেট্রোরেল ছাড়লেও প্রতিটিতে ছিল যাত্রী বোঝাই। প্রতিটি বগিতে যাত্রীতে ঠাসা। এতে করে বগি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর ট্রেন সার্ভিস চালুর দাবি জানান তারা। উত্তরা স্টেশন থেকে যাত্রী বোঝা হয়ে পল্লবী স্টেশনে আসছে। পল্লবীতে স্বল্পকিছু যাত্রী নামলেও উঠছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। বেশিরভাগ যাত্রীর গন্তব্য মতিঝিল, সচিবালয়, ফার্মগেট ও আগারগাঁও। তবে যেসব যাত্রীর মেট্রোপাস নেই তাদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিতে হচ্ছে তাদের। এদিকে মেট্রোরেলে ভিড় থাকলেও যাত্রীর খরা দেখা দিয়েছে এই রুটের চলাচলকারী বাসগুলোতে। উপরে মেট্রোরেলের বগিগুলো যখন যাত্রীতে পূর্ণ, তখন নিচে সড়কে বাসগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে যাত্রীর জন্য।
এ বিষয়ে কথা হয় মিরপুর এলাকার বিআরটিসি পরিবহণের বাস অ্যাসিসটান্ট সালাউদ্দিনের সাথে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মেট্রোরেল চালু হওয়ায় অফিস সময়েও এখন যাত্রী একেবারে সীমিত। রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ায় আসার সময়ে যাত্রী পাওয়া যায় না। এভাবে চললে তো আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।’
একইভাবে অফিস শেষে বিকেল ৫টার পর মতিঝিল ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে দেখা যায়, মেট্রোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। কারওয়ান বাজার স্টেশনে লম্বা লাইন ধরে টিকিট কাটছে যাত্রীরা। মেট্রোরেলের যাত্রী অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে জানান, আমি ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশা প্র্যাকটিস করি, বাসা মিরপুরে। এতোদিন কোর্টে ১০টা পৌঁছাতে হলে আমাকে সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টায় বাস ধরতে হতো। যেদিন এ সময়ে মিস করতাম তখন সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু এখন মেট্রোরেল পুরোদমে চালু হওয়ায় সচিবালয় স্টেশনে নামি। আবার কোর্ট শেষে সেখান থেকে মিরপুরের জন্য উঠি। দ্রুত সময়ে বাসায় যাতায়াত করছি। সঠিক সময়ে অফিস করার সুযোগ পাচ্ছি। তবে আরও কিছু বগি বাড়ানো ও প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর ছাড়লে ভালো হবে।’
একইভাবে কারওয়ান বাজার স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষমান রফিক উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি একটি প্রাইভেট ব্যাংকে জব করি কারওয়ান বাজার শাখায়। মেট্রোরেল রাত পর্যন্ত চালু হওয়ায় যাওয়ার সময়ও সহজে বাসায় যেতে পারছি। তাছাড়া এমআরটি পাস কার্ড করে নেওয়ায় টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় না।’
প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিরত আরমান হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ের স্কুল ধানমণ্ডির শংকরে। মেয়েকে নিয়ে মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে ধানমণ্ডিতে নিয়মিত আসতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। এখন মেট্রোরেলে ফার্মগেটে এসে এখান থেকে লেগুনায় কম সময়ে সহজেই যাতায়াত করতে পারি। আগে সকালবেলা গাড়ি পেতে কষ্ট হতো, এখন আর সেটি হচ্ছে না। টাকা একটু বেশি গেলেও এটা আমাদের জন্য স্বস্তির।’
২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর উত্তরা-আগারগাঁও অংশে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহণ শুরু করে মেট্রোরেল। কিছুদিন সীমিত পরিসরে চলার পর গত ৩০ মার্চ পুরোদমে শুরু হয় যাত্রী পরিবহণ। ধাপে ধাপে এখন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণ করছে মেট্রোরেল। এর মধ্যে উত্তরা-মতিঝিল রুটে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল।
যাত্রীরা বলছেন, রাজধানীর বাসগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। সেখানে মেট্রোরেল বড় ধরনের স্বস্তি বয়ে এনেছে। হরতাল-অবরোধেও মেট্রোতে চলাচল সম্পূর্ণ নির্বিঘ্ন। ফলের বাসের যাত্রীরা ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ছেন মেট্রোরেলে।
বিকল্প পরিবহণের এক বাস চালকের সহকারী সুমন মিয়া বলেন, ‘সকালে এখন যাত্রী কম থাকে। আগে লোকাল যাত্রী বেশি উঠলেও এখন সিটিং সার্ভিসের যাত্রী বেশি।
ওই বাসের এক আসনে বসেছিলেন এক যাত্রী। চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে দেখে জানালা দিয়ে ডেকে তিনি বলেন, ‘মেট্রো আসায় বাসওয়ালাদের উচিত শিক্ষা হইছে। আগে আমাদের জিম্মি করত এরা। এখন যাত্রী পায় না।’
এই পরিস্থিতি স্বীকার করে নিয়ে বাসমালিকরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে তারা পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। বাস সংস্কার করা, সিটিং সার্ভিস চালুসহ যাত্রীবান্ধব বাস সার্ভিস দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করার কথা ভাবছেন তারা।
বিকল্প পরিবহণের মালিক এবং বাস মালিক সমিতির নেতা মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকল্প পরিবহণের মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী বাসে যাত্রী সংকট চলছে। নতুন রুট পারমিট কবে পাব, তা নিশ্চিত নয়। কারণ দেড় বছর ধরে আরটিসির (রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি) মিটিং বন্ধ। বাসগুলোর বেহাল দশা ও যাত্রীসেবা মানসম্মত না হওয়ার অভিযোগও স্বীকার করছেন বাসমালিক সমিতির এই নেতা।’