নিউজ ডেস্ক:
স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার আব্দুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ বলায় দৈনিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ‘সম্প্রীতি, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির বিজয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং একুশের গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কাদের মোল্লা একজন আত্মস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী। আদালতের বিচারের মাধ্যমে তার ফাঁসির রায় হয়েছে, রায় কার্যকর হয়েছে। একটি প্রত্রিকার (দৈনিক সংগ্রাম) কাগজ তাকে ‘শহীদ’ বলেছে। তাদের (বিষয়ে) কথা বলার ভাষা আমার নাই। এটি বললে মুখের পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যায়। ওর মতো একটা রাজাকার, কুলাঙ্গার, জল্লাদ, কসাই…তার জন্ম কী আমরা জানি না। যার জন্মের ইতিহাস নাই, একটা খুনি ধর্ষণকারী, বাঙালি হত্যাকারী, মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী, আমার মা-বোনের হত্যাকারী, তার (বিষয়ে) কথা বলার আর কিছু নেই।”
তিনি বলেন, ‘এখন সবার প্রশ্ন হচ্ছে, তার বিচার কি হবে? হ্যাঁ, তার বিচার শুরু হয়ে গেছে। সবাই কথা বললে হবে না, কাজ করতে হবে।’
সংগ্রাম পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই পত্রিকার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা মন্ত্রণালয় (তথ্য মন্ত্রণালয়) নেবে, যেন এই বাংলাদেশে এই ধরনের ধৃষ্টতা কেউ দেখাতে না পারে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দোপাধ্যায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিকুর রহমান, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সিনিয়র সাংবাদিক হারুন হাবিব, সাবেক সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ ও শহীদকন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ ।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘সব জায়গায় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রেস ক্লাবেও ষড়যন্ত্র চলছে। মক্তিযুদ্ধের কর্নার নামে আলবদরদের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। এখানে অনেকে মুখে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করেন কিন্তু তারা গোপনে জামায়াত প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় আমি দিয়েছে। তার মতো রাজাকার কসাইকে যারা ‘শহীদ’ বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেননি দাবি করের তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান নিজে বাঁচতে নামমাত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী।
সিনিয়র সাংবাদিক হারুন হাবিব বলেন, আমাদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শুধু মুখে নয় হৃদয় থেকে বলতে হবে।
সাবেক সচিব মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের বিজয়ের এ মাসে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারকে ‘শহীদ’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সংগ্রাম সম্পাদককে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আমাদের দাবি, পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলসহ জামায়াত নিষিদ্ধ করা হোক।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। ১২ ডিসেম্বর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ষষ্ঠ শাহাদতবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর প্রতিবাদে পত্রিকাটিকে নিষিদ্ধ করা এবং সম্পাদক আবুল আসাদকে গ্রেফতর ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পত্রিকা অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দেয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারে সংগ্রাম কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় একদল যুবক।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের ঘটনায় দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।