বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

পানিসহ যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডারে, কোম্পানির লাভ ডিলারের পকেটে

পানিসহ যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডারে, কোম্পানির লাভ ডিলারের পকেটে

ডেস্ক রিপোর্ট :
স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের জন্য ফিলিং স্টেশনের গ্যাস রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি সিলিন্ডারের ক্রস ফিলিং করা বেআইনি। একাজ কেউ করলে তার লাইসেন্স বাতিল ও পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ত্রিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সুপারিশ আর হুমকির কারণে কিছুই করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

খুলনা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. মো. আসাদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ফিলিং স্টেশনটির লাইসেন্স তার বাবার নামে। কিন্তু উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিজের বলে হুমকি দেন। এনটিভিতে খবর প্রচারের পর তারা পরিদর্শন করে ক্রস ফিলিং করার প্রমাণও পেয়েছেন এবং ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে সুপারিশ করেছেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন পারভিন রুমা তদবির করার কথা স্বীকার করে জানান, এটি তাদের পারিবারিক ব্যবসা।

খুলনা–সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে এ লতিফ ফিলিং স্টেশন। পাশেই ডুমুরিয়া থানা ও উপজেলার প্রশাসনিক দপ্তর। এ লতিফ ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল, ডিজেল, অকটেনের পাশাপাশি এখানে  গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ স্টেশনটি সামনে থেকে দেখা গেলেও দুই পাশে বিকেল হতেই দুটি ট্রাক ড্রাম  রেখে আড়াল করে রাখা হয়। পেছনে পিকআপভ্যানে বসুন্ধরা ব্রান্ডের এলপিজি গ্যাস সিডিন্ডারের গ্যাস ভরা হচ্ছে। এসময় এ প্রতিনিধি দেখতে গেলে মালিকের লোকেরা এ প্রতিনিধিকে ধমক দেন। বলা হয় বসুন্ধরা গ্যাস সরবরাহ নেই, তাই তারা মানুষের উপকারের জন্য এই ক্রসফিলিং করছেন। দুটি পাইপের মাধ্যমে শত শত বসুন্ধরা এলপিজি সিলিন্ডারে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। যানবাহনের গ্যাসের লিটার ৬৮ টাকা আর রান্নার গ্যাসের লিটার পড়ে ১০৭ টাকার ওপরে। তবে এসব ক্রস রিফিল গ্যাস সিলিন্ডারের পানিসহ এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। বসুন্ধরা, ওমেরা, লাফার্জ সব ব্রান্ডের সিলিন্ডারে এখানে ক্রস ফিলিং হয়। আট-নয়শ থেকে এক হাজার টাকার গ্যাস সরবরাহ করা হয়। অথচ বসুন্ধরার ডিলার মূল্য ১৫৫০ টাকা আর গ্রাহকের কাছে বিক্রি মূল্য ১৬০০ টাকা।সেখানে কর্মরত স্টাফরা সাংবাদিকদের ক্যামেরা বন্ধ করার চাপ দিয়ে সাহেবের (মালিক) সাথে কথা বলতে বলেন। পরে ক্যামেরা বন্ধ করে প্রতিনিধিদের সাহেবের অফিসে (লতিফ জমাদ্দার) নিয়ে যাওয়া হয়। এই ফিলিং স্টেশনের তৃতীয়তলার অফিসটিতে সরকারি অফিসের মতো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ঝোলানো রয়েছে।

ফিলিং স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহের কথা স্বীকার করে এ লতিফ ফিলিং স্টেশনের মালিক মো. আব্দুল লতিফ জমাদ্দার বলেন, বসুন্ধরার গ্যাস নাই। ইরান থেকে গ্যাস আসছে না। তাই মানুষের উপকারের জন্য ক্রস ফিলিং করতে হচ্ছে।

প্রশাসনকে চাঁদা দেওয়ার কথা বলে আব্দুল লতিফ জমাদ্দার জানান, আভা সেন্টারের পাশে রাসেল স্কুলের জন্য ইটভাটা হতে ৩-৪ হাজার করে বিনামূল্যে ইট সরবরাহ করতে হচ্ছে। স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বরে চাঁদা দিতে হয়। খাস জমিতে ইটভাটা করার পরও তাকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, আবার চাঁদাও দিতে হয়।

জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম জানান, ফিলিং স্টেশনের গ্যাস সিলিন্ডারে ক্রস ফিলিং অবৈধ কাজ। তাদের কাছে আগে থেকেই অভিযোগ আছে। ফিলিং স্টেশনের গ্যাসের সাথে পানি দেওয়া হয়। পানি দেওয়ায় গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছে। কিন্তু তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

বিস্ফোরক অধিদপ্তর খুলনার পরিদর্শক ড. মো. আসাদুল ইসলাম জানান, পরিদর্শন করে ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু লতিফ জমাদ্দারের মেয়ে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে এসব করছেন। আইনে স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের গ্যাস বোতলজাত সিলিন্ডারের ক্রস ফিলিং করলে পাঁচ বছরের জেল আর ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান আছে। একই সাথে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। লাইসেন্স আব্দুল লতিফের নামে থাকলেও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাদের সাথে ধমক দিয়ে কথা বলেন।

ভৌগলিক কারণে ডুমুরিয়ার এই ফিলিং স্টেশন হতে খুলনা-সাতক্ষীরা-যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় গ্যাস সরবরাহ হয়ে থাকে। এমনকি ঢাকায় যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। বসুন্ধরার এলপিজি গ্যাস সরবরাহ করলে ডিলাদের মুনাফা হয় সিলিন্ডার প্রতি ৫০-৬০ টাকা আর এই ক্রস ফিলিং করলে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতি সিলিন্ডারের মুনাফা করেন ৫০০-৬০০ টাকা।

বসুন্ধরার গ্যাস সরবরাহকারী খুলনার ডিলার সামসুজ্জামান শাহিন জানান, গ্যাস সিলিন্ডার প্রতিবার ক্রস ফিলিং করার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়; যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। এই বেআইনি ক্রস ফিলিংয়ের কারণে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন পারভিন রুমা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শককে মোবাইলফোন করার কথা স্বীকার করে বলেন, ফিলিং স্টেশন, ইটভাটা সবই তাদের পারিবারিক ব্যবসা।

একথা বলে শারমিন পারভিন রুমা এ প্রতিনিধিকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, কোন সাংবাদিক নিউজ করে না, আপনি করেন কেন?

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech