ডেস্ক রিপোর্ট :
বরিশাল সদর উপজেলার একটি পল্লী থেকে সোমবার স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বজনদের সহযোগিতায় ইটবহনকারী ট্রলি শ্রমিকেরা ১৫ তারিখ বেলা ১২টার দিকে বদ্ধঘরের দরজা ভেঙে তাদের দুজনের লাশ বের করে নিয়ে আসে। পরক্ষণে সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর (সাহেবের হাট) থানা পুলিশ গিয়ে চরকাউয়া ইউনিয়নের পূর্ব কর্নকাঠির বাড়ি থেকে অটোরিকশা চালক রাহাত হাওলাদার (২৫) এবং তার স্ত্রী লামিয়া আক্তারের (১৯) লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে মর্গে পাঠিয়ে দেয়।
বদ্ধঘরে স্বামী-স্ত্রীর প্রাণবিয়োগ নিয়ে এলাকায় বহুমুখী কানাঘুষা চলা এবং দুটি পরিবার এককে অপরকে দোষারোপ করলেও তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণসমূহ রাতারাতি উন্মেচন করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার উভয় পরিবারের কাছে লাশ দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
বন্দর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, রাহাত এবং লামিয়ার মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল, রোববার রাতেও তাদের মধ্যেকার ঝামেলা হয়। পরদিন অর্থাৎ সোমবার বেলা ১২টার দিকে তাদের দুজনের কেউ বাসা থেকে বের না হওয়ায় স্বজনেরা ডাকাডাকি শুরু করেন। এতে কোনা সাড়াশব্দ না পেয়ে চিককার করলেও পার্শ্ববর্তী ইটভাটার শ্রমিকেরা সরঞ্জাম নিয়ে এসে দরজা ভেঙে রাহাতকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত এবং স্ত্রী লামিয়ার লাশ বিছার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে দুই পরিবারের কাছে লাশ দুটি হস্তান্তর করে পুলিশ।
এর আগে দুটি মরদেহের সুরতহাল করেছে বন্দর থানা পুলিশ। এতে যুবকের গলায় রশির দাগ পেলেও লামিয়ার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ফলে এখন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার আগ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বন্দর থানা পুলিশের ওসি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ছেলে রাহাতের পরিবার লামিয়ার বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনেছেন। লামিয়া তাদের ছেলের স্ত্রী হওয়ায় সত্ত্বেও বাইরে কারও সাথে প্রেমসম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বামী রাহাতের সাথে লামিয়ার প্রায়শই প্রচণ্ড ঝগড়া হতো। বিশেষ করে রাতেরা বেলা তাদের ডাক-চিৎকারের আওয়াজ এরআগেই স্থানীয়রা শুনেছেন।
সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারনা করছে, আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামী রাহাত তার স্ত্রীকে হত্যা করেন। এবং পরবর্তীতে অনুশোচনায় ভুগে তিনিও ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। আবার অনেকে পুলিশকে এমনও তথ্য দিয়েছেন, লামিয়ার পরকীয়া প্রেমিক তাদের দুজনকে হত্যা করতে পারেন। তবে পুলিশ বিভিন্ন সমীকরণ মিলাতে গিয়ে এই তথ্যের ওপর ভরসা না রাখতে পারছে না।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে দুই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরের পূর্বে ব্যতিক্রম কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দর থানা পুলিশের এসআই পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, পড়শিরা তাদের তথ্য দিয়েছে যে রাহাত এবং লামিয়ার মধ্যে কলহ ছিল, যা নিয়ে তাদের ওপর রাহাতের স্বজনেরা সংক্ষুব্ধ ছিলেন। বিশেষ করে লামিয়ার বেশকিছু উশৃঙ্খল আচরণ এবং চলাফেরা তাদের বিরক্ত করে তোলে। ফলে স্বজনদের ক্ষোভই কী রাহাত এবং লামিয়াকে জীবন কেড়ে নিয়েছে তাও খতিয়ে দেখতে হচ্ছে।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পাওয়ার আগে বরিশাল পুলিশের দায়িত্বশীল মহল এনিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও দুটি প্রাণবিয়োগের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্বসহকারে দেখছে। এবং সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে এই মৃত্যুর প্রকৃত কারণসমূহ উন্মোচন করতে সোমবারই কঠোর বার্তা দিয়ে রেখেছেন।
ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, অটোরিকশা চালক রাহাত ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়েছেন, প্রাথমকিভাবে এটা মেনে নিলেও স্ত্রী লামিয়ার মৃত্যু রহস্যবৃত্ত। সুরতহাল রিপোর্টে তার শরীরে কোথায় আঘাতেও চিহ্ন নেই, তাহলে লামিয়ার মৃত্যু হলো কী করে। তবে তাকে কি বিষাক্ত কিছু পান করিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফলে দুটি মৃত্যুর ঘটনায়ই ধোয়াশা তৈরি করে রেখেছে, যা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগে কিছু বলা সম্ভবপর হচ্ছে না। এই ঘটনায় নিহত লামিয়ার পরিবারকে এজাহার দিতে বলা হয়েছে। এবং বদ্ধঘরের দরজা ভেঙে ইটবহনকারী শ্রমিক যারা লাশ দুটি বের করেছেন, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকার প্রস্তুতি চলছে। সবকিছু মিলিয়ে বরিশালের এই জোড়া মার্ডারের রহস্য উন্মোচনে জোরালো ভুমিকা রাখতে যাচ্ছে মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসন।’