আওয়ামী লীগের গত ২০তম জাতীয় সম্মেলনের আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেতে যাওয়ার ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছিলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই সময় তিনি নিজেই তার ঘনিষ্ঠ নেতাদের এ কথা বলেছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। তবে আসন্ন ২১তম জাতীয় সম্মেলনে আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ‘সবুজ সংকেত’ এখনো কেউ পাননি। দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত একডজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদাতা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলন ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণত নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হয়। তবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের সভাপতি পদে যে পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত। বাকি সাধারণ সম্পাদক পদসহ নেতৃত্বের অন্যান্য পর্যায়ে পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা যায়। সেজন্য এখন সবার আগ্রহ-আলোচনা সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর ওই সদস্যরা জানান, বিগত সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্মেলনে কাদের কণ্ঠভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও বিষয়টি আগে থেকেই অনেকটা চূড়ান্ত হয়েছিল। এবারের সম্মেলনে কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক, তা নিয়ে দফায় দফায় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পাশাপাশি যৌথভাবে একাধিকবার বসেছেন। কোনো কোনো সময় গ্রুপ গ্রুপ ভাগ হয়েও বসেছেন। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো সংকেত বা ইঙ্গিত তারা পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত তিনজন সদস্য বলেন, ‘বর্তমান সাধারণ সম্পাদককে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে কোনো সংকেত নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) দিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। তবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক যদি পুনরায় দায়িত্ব না পান তাহলে দলের একজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা একজন কাযনির্বাহী সদস্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন বলে ধারণা করছি।’
সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের বিষয়টি দলীয় সভাপতি ও সম্মেলনে আগত কাউন্সিলর-ডেলিগেটদের হাতে থাকায় এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি কোনো নেতাই। তবে বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক ডজন নেতার নাম বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনায় এলেও বর্তমান সাধারণ সম্পাদকসহ চারজন নেতাই এ পদের দৌড়ে সর্বাগ্রে রয়েছেন। ওই চার নেতার অনুসারীরা মনে করেন, এদের মধ্য থেকে যে কেউ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেলে আওয়ামী লীগের আগামী দিনের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘দলের একজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আছেন, যিনি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদের একটিতে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ত্যাগ শিকার করেছেন। ওই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক যদি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান, তাহলে নেত্রীর বিশ্বস্ততা নিয়ে দল চালাতে পারবেন।’
আরেক সাবেক নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক রাজনীতি বোঝেন, অপেক্ষাকৃত তরুণ ও জাতীয় রাজনীতিতেও ক্লিন ইমেজ রয়েছে একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের। নেত্রীর বিশ্বস্ত হিসেবে বহুবার তিনি প্রমাণ দিয়েছেন। ওই সাংগঠনিক সম্পাদক যদি সাধারণ সম্পাদক হন তাহলে খুবই ভালো হবে।’
অবশ্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুসারীরা নিজ নিজ নেতাকে আগামী দিনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চান। সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দেবেন তারা।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘একটা পদে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সেটা হচ্ছে আমাদের পার্টির সভাপতি। আমাদের সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তিনি ছাড়া আমরা কেউই অপরিহার্য নই। তিনি এখনও আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক অপরিহার্য। তৃণমূল পর্যন্ত সবাই তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। এর পরের পদটা কাউন্সিলরদের মাইন্ড সেট করে দেয়। সেটাও তিনি (সভাপতি শেখ হাসিনা) ভালো করে জানেন।’