নিজস্ব প্রতিবেদক:
তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্পোরেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সবধরনের কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। সেখানে সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের জন্য ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদন ফরমে প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপশন রাখা হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বিসিএসের আবেদন ফরমে এই অপশনগুলো কেন রাখা হয়েছে?
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, এ অপশনগুলো কোটা সুবিধা দেয়ার জন্য রাখা হয়নি। প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধারা বিসিএসে ৩২ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারে এবং তাদের আবেদনের ফরমের দামও কম। এসব সুবিধা দেয়ার জন্য এ অপশনগুলো রাখা হয়েছে।
পিএসসি এই কাজগুলো গোপনে করে তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে-অভিযোগ এনে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট আন্দোলনকারীরা।
পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘এগুলো রাখা আছে অন্য কারণে। এ অপশনগুলো রাখা হয়েছে কারণ কারও ফি ১০০ টাকা, কারও ৭০০ টাকা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ফি দেয় ১০০ টাকা। আবার কারও বয়সের ব্যাপার আছে। কোনো কোটার জন্য এই অপশনগুলো রাখা হয়নি।’
পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছার উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, ’৪১তম বিসিএসের ফরমে কোটার কথা উল্লেখ নেই। অপশনগুলো দেখাচ্ছে, কারণ বয়সের বিষয় আছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৩২ বছর পর্যন্ত সুযোগ আছে। উপজাতি প্রার্থীদের ৩২ বছর পর্যন্ত সুযোগ আছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বয়স তো বাতিল করেনি। ফরমে এই অপশনটা না থাকলে তারা এই সুবিধাটা পাবে না। এজন্য রাখা হয়েছে। কোনো কোটার সিস্টেম নেই। পুরো বিজ্ঞাপনের কোথাও কোটার কথা বলিনি আমরা।’
তবে পিএসসির এ ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা বলিনি যে মুক্তিযোদ্ধা, নাতিপুতি কোটা বাতিল করতে হবে। কোটা যদি দিতেই চায় তারা প্রকাশ্যে দিক। মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত নাগরিক, তাদের গোপনভাবে দিতে হবে কেন? প্রকাশ্যে পাবে তারা সুবিধা।’
‘আমি নিজেও পিএসসিতে যোগাযোগ করেছি, সে সময় তারা এ বিষয়ে উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে’, যোগ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি প্রথম শ্রেণির পদে কোটা বাতিলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেখানে মুক্তিযোদ্ধার নাতি অপশন কেন জিজ্ঞাসা করি। আমি সন্তানের বিষয়টা জানি, তাদের বয়স সুবিধা দেয়া হবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার নাতির বিষয়টা খটকা তৈরি করেছে। আজ আপনার মাধ্যমে জানলাম সেটা ফি জনিত কারণে দিয়েছে। কিন্তু তারা বিজ্ঞপ্তির ফি বিষয়ক প্যারায় এমন কিছু লেখেনি, সন্তান বিষয়ে নির্দেশনা আছে নাতি বিষয়ে নির্দেশনা নেই। তাদের কোনো বিষয়ে তথ্য চাইলেই গোপনীয়তার কথা বলে। অথচ এটা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাজনিত কোনো বিষয় নয়, গোপনীয়তা জুজুতে তারা তথ্য অধিকার ২০০৯ লঙ্ঘন করছে বলে আমি মনে করি।’
কেন পিএসসির ওপর আস্থা রাখব? প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আজ মুক্তিযোদ্ধার নাতি অপশন দিয়ে তারা চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে তামাশা করছে। অথচ বিজ্ঞপ্তিতে ফি বিষয়ে তাদের কথা উল্লেখ নেই। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতির তথ্য এভাবে সংগ্রহ করায় চাকরিপ্রত্যাশীদের মাঝে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। একইভাবে প্রিলির (প্রিলিমিনারি) নম্বর গোপনীয়তার অজুহাতে প্রকাশ না করায়ও আমরা সন্দেহ প্রকাশ করছি। তাদের এই জায়গাটা পরিষ্কার করার আহ্বান জানাচ্ছি।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদের সই করা পরিপত্রে বলা হয়, ‘সরকার সকল সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৭/০৩/১৯৯৭ তারিখের সম (বিধি-১) এস-৮/৯৫(অংশ-২)-৫৬(৫০০) নং স্মারকে উল্লিখিত কোটা পদ্ধতি নিম্নরূপভাবে সংশোধন করিল:
ক. ৯ম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হইবে; এবং
খ. ৯ম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা ইহল।’