বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হবে।
এ-সংক্রান্ত আবেদনের ওপর জারি করা রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রায় ঘোষণার জন্য আজ দিন ধার্য করেন।
মিন্নির জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বেঞ্চ গত ২০ আগস্ট সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছিলেন। তাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলার নথিসহ ২৮ আগস্ট হাইকোর্টে তলব করা হয়।
এ ছাড়া মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন দাবি করে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে বরগুনার এসপিকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী বুধবার এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার নথিসহ হাজির হন। একই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে বরগুনার এসপির দেওয়া লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করা হয়। রিফাত শরীফ হত্যার আগে-পরে নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রী মিন্নির মোট ১৩ বার মোবাইলে কথা হয় বলে আদালতকে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিন আদালতে মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও জেড আই খান পান্না। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, ব্যারিস্টার অনিক আর হক, আইনজীবী এম মঈনুল ইসলাম, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম, রোহানি সিদ্দিকা ও জামিউল হক ফয়সাল উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী।
গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। পরে গুরুতর আহত রিফাতকে ওই দিনই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। গত ২ জুলাই এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
এই মামলায় ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাড়ি বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা-মাইঠা এলাকা থেকে পুলিশ লাইন্সে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পরদিন মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে ওই আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে কয়েক দফায় মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন বিচারিক আদালত। এরপর হাইকোর্টে মিন্নির জামিন চেয়ে ফের আবেদন করা হয়।