‘একটু চা খাব? খাই একটু? আপনারা খাবেন? ঢেলে দেই?’ ‘ভাই পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হইচই আছে?’ এই শব্দগুলো এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা।
মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এসব শব্দ বা বাক্যগুলো ‘উসকানিমূলক’ হিসেবে দেখছেন। তাই তারা ওই বক্তাকে রাখছে নজরদারিতে।
গতকাল বুধবার পুলিশ হেডকোয়াটার্স ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকদিন ধরে পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছে মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর নামে। অভিযোগ তুলছে তার অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গি নিয়েও। ফলে স্বাভাবিকভাবে তার কার্যক্রম মনিটরিং করছে পুলিশ। যেখানে আত-তাহেরী নতুন করে ওয়াজ মাহফিল করবেন সেখানেও থাকছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছেন, মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীকে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সামাজিক মূল্যবোধ বজায় রেখে ওয়াজ করতে। তার কারণে ধর্মীয় কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হলে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। এ কথাগুলো তাহেরীসহ কয়েকজন বক্তাকে প্রাথমিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ বলেন, ‘ওয়াজ করার সময় অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য কিংবা অশ্লীল বাক্য বলা যাবে না। যদি কেউ এরূপ করে থাকেন এবং সেই বক্তব্য যদি সামাজিকভাবে বাজে প্রভাব ফেলে তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এই মনিটরিংয়ের কাজগুলো আমরা করে থাকি।’
সাইদ নাসিরুল্লাহ আরো বলেন, ‘মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর কয়েকটি ভিডিও আমি দেখেছি। সেগুলো ডাউনলোড করেও রেখেছি। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। শুধু তাহেরী নন, এ রকম আরো কয়েকজনকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। আমরা তাদের উদ্দেশ্যকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
তাহেরীর বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, ‘মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর কথা আমিও শুনেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ওয়াজের সময় তার বক্তব্যের ভেতরে যদি কোনো ধরনের কুরুচিপূর্ণ ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করা হয় আর সেটা যদি সামাজিক, ধর্মীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ নষ্ট করে তাহলে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সেটা মেনে নেবে না।’
সোহেল রানা বলেন, ‘কেন সে এই ধরনের বক্তব্য ব্যবহার করছে, তা আমি জানি না। তবে যদি তার উদ্দেশ্য অসৎ হয় তবে আমরা অব্শ্যই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। অশ্লীল কথা কিংবা অঙ্গ-ভঙ্গি কোনোটাই আমাদের সৌহার্দ্যবোধের সংস্কৃতিতে কাম্য নয়। তাকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি।’
দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করেন মুফতি মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী। জানা যায়, তিনি ‘দাওয়াতে ঈমানী বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া তাহেরীর বক্তব্যগুলো ইউটিউব, ফেসবুকে পাওয়া যায়। সম্প্রতি তাঁর বলা ‘বসেন, বসেন, বসে যান’ সংক্রান্ত কথাগুলোও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।