বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

আমতলীতে গ্রাহকের সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ভুয়া কোম্পানী

আমতলীতে গ্রাহকের সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ভুয়া কোম্পানী

মো: মহসীন মাতুব্বর, আমতলী প্রতিনিধি:
পন্য বিক্রি ও টাকা জামানত রাখার নামে সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে মোনাবী অল বাংলাদেশ নামের একটি ভুয়া বে-সরকারী কোম্পানী। এতে দুই’শ পাচ জন কমী ও প্রায় এক হাজার গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে সোমবার দুপুরে আমতলী পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কে। ক্ষুব্দ গ্রাহকরা অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

জানাগেছে, মোনাবী অল বাংলাদেশ নামের একটি ভুয়া বেসরকারী কোম্পানীগত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আমতলীতে পন্য বিক্রি ও অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়েগ্রাহক সংগ্রহ করে। প্রথমে আমতলী পৌর শহরের সাকিব প্লাজার তিন তলায় অফিস নেয়। ওই খানে গত এক বছর ধরে কাযক্রম পরিচালনা করে আসছে তারা।গ্রাহক সংগ্রহের জন্য আমতলী উপজেলায় দুই শত পাচ জন প্রতিনিধি নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুল।

 

প্রত্যেক প্রতিনিধির কাছ থেকে জামানত বাবদ সত্তর হাজার টাকা নেয়। প্রতিনিধিদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষক দেয় তারা। প্রত্যেক প্রতিনিধি বিশ হাজার টাকা দামের একটি এলইডি টিভি বিক্রি করতে পারলে কোম্পানী কতৃপক্ষ এক হাজার পাচ’শ একচল্লিশ টাকা ফেরত দেয়। টিভি না নিয়ে টাকা জমা দিলেও তাকে ওই পরিমান টাকা ফেরত দেয় কোম্পানীর কতৃপক্ষ। এভাবে যে যতগুলো টিভি বিক্রির নামে টাকা জমা দিতে পারবে তাকে প্রতি টিভি বাবদ এক হাজার পাচ’শ এক চল্লিশ টাকা দেয়া হবে। অধিক মুনাফার আশায় আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় এক হাজার গ্রাহক এভাবে টাকা জমা দিয়েছেন। পন্য বিক্রি ছাড়াও অনেক গ্রাহক অধিক মুনাফার আশায় টাকা জমা দিয়েছেন।

 

এছাড়াও এক লক্ষ টাকায় মাসে সাত হাজার সাত’শ আট টাকা লাভ দিবে বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। এভাবে প্রায় এক হাজার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে এই প্রতারক চক্র। ওই প্রতারক চক্র গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান কোম্পানীর স্টোর ইন চাজ জামাল মিয়া।তাদের কাযক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমতলীর জনমনে সন্দেহ ছিল। গত তিন মাস আগে সাকিব প্লাজার অফিস ছেড়ে আমতলী হাসপাতাল এলাকায় অফিস ভাড়া নেয়। সোমবার দুই’শ পাচজন প্রতিনিধিদের বেতন দেয়ার কথা ছিল।

 

ওইদিন সকালে ওই প্রতিনিধিরা অফিসে বেতন নিতে আসেন। এ সময় অফিসের মাকেটিং অফিসার আনিস মিয়া, হিসাব রক্ষক আল আমিন, স্টোর ইন চাজ জামাল মিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র শীল উপস্থিত ছিল। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুলের দেখা নেই। এর পরপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চেয়ারম্যানের ফোন বন্ধ পেয়ে অফিসের কমকতারা সকলে সটকে পড়ে। এতে প্রতিনিধিদের সন্দেহ হয়। পরে উপস্থিত গ্রাহক ও প্রতিনিধিরা অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর করে। খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ দিকে কোম্পানী টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে কয়েক শত গ্রাহক অফিসের সামনে জড়ো হয়। অনেক গ্রাহক ও প্রতিনিধি টাকা হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে। এ ঘটনার পরপর কোম্পানীর চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুলসহ অফিসের সকল কমকতাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।

 

গ্রাহক ও প্রতিনিধি নাগিস বেগম বলেন, আমি সরল বিশ্বাসে এ কোম্পানীতে দশ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি। প্রতিমাসে আমাকে সত্তর হাজার সাত শত টাকা মুনাফা দিতো। এভাবে গত তিন মাস পেয়েছি। এখনতো আমার সবই গেল। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমাকে এখন পথে বসতে হবে।
বৈঠাকাটার গ্রামের লিজা বলেন, চাকুরী দিবে বলে আমার কাছ থেকে সত্তর হাজার টাকা নিয়েছে। এখন তারা আমাকে চাকুরী না দিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।
জান্নাতি বলেন, আমি চাকুরী দেয়ার সময় এক লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি। এখন পযন্ত বেতন পাইনি। এখনতো পালিয়েই গেল। কি জবাব দিব বাড়ীতে গিয়ে।
প্রতিনিধি মেঘলা বলেন, আমি সকালে অফিসে বেতন নিতে এসে শুনি চেয়ারম্যান জামাল হোসেন বেতন নিয়ে আসবেন। সকাল থেকে দুপুর পযন্ত অপেক্ষা করেছি। পরে এক এক করে অফিসের সবাই পালিয়ে গেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।

আমতলী কাউনিয়া গ্রামের মোঃ জিয়া উদ্দির জুয়েল বলেন, মুনাফা দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।
মোনাবী অল বাংলাদেশ আমতলী শাখার স্টোর ইন চার্জ জামাল মিয়া বলেন, কোম্পানীর চেয়ারম্যান প্রতারক জামাল হোসেন মুকুল আমতলীর বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে মোনাবী অল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোঃ জামাল হোসেন মুকুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আমতলী থানার এসআই মোসাঃ নাসরিন বেগম বলেন,খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছি। প্রতারক চক্র পালিয়ে গেছে।

আমতলী থানারওসি তদন্ত মনোরঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech