শামীম আহমেদ:
জেলার গৌরনদী উপজেলার উত্তর বিল্বগ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয়করণ করা হয়নি। ফলে দীর্ঘবছর গ্রামের কোমলমতি শিশুদের বিনাবেতনে শিক্ষাদান করে আসা শিক্ষকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানববেতর জীবন-যাপণ করছেন।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মনিরা খানম জানান, ২০০৯ সালে স্থানীয়দের সহায়তায় উত্তর বিল্বগ্রামের কোমলমতি শিশুদের প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষাদানের জন্য উত্তর বিল্বগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে অদ্যবর্ধি চারজন শিক্ষক গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিনাবেতনে পাঠদান করিয়ে আসছেন। বর্তমানে স্কুলে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১১ সালে থেকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি পায়। শুরু থেকে বিদ্যালয়ে সাফল্যজনক ফলাফলসহ শতভাগ পাশ করে আসছে। এমনকি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি তিনতলা ভবন নির্মানের মাধ্যমে বিদ্যালয়টিকে সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রুপান্তর করা হয়।
তিনি আরও জানান, সরকারীভাবে বিদ্যালয় ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য বই সরবরাহ করা হলেও বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পরেও জাতীয়করণ করা হয়নি। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে তারা (শিক্ষক) দিনাতিপাত করছেন।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কালিয়া দমন গুহ জানান, উত্তর বিল্বগ্রাম এলাকায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে ছিলো এই এলাকার কোমলমতি শিশুরা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে স্থানীয়রা স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এরপর স্থানীয় হামেদ বেপারী, ওয়াজেদ আলী বেপারী, আব্দুর রশিদ, আব্দুল মজিদ বেপারী, মোমেনা বেগম, হাজেরা বেগম ও রিজিয়া বেগম নামের দাতারা বিদ্যালয়ের জন্য ৩৩ শতক জমি দান করেন।
একই বছর এলাকাবাসির সহায়তায় কাঠ ও টিন দিয়ে ঘর উত্তোলনের মাধ্যমে উত্তর বিল্বগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। একপর্যায়ে বিদ্যালয়টিতে মনিরা আক্তার, নারগিস আক্তার, মরিয়ম বেগম ও তাসলিমা সিকদারকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর স্কুলটি জাতীয়করনের জন্য ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ শাহ আলম বিদ্যালয়ের অনুমতির সুপারিশসহ চেকলিষ্ট বরিশাল প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালকের কাছে প্রেরন করেন।
উপ-পরিচালক এসএম ফারুক ওইবছরের ১১ নভেম্বর তৎকালীন সময়ের বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তালুকদার মোঃ ইউনুসের ডিউ লেটারসহ বিদ্যালয়টি অনুমোদনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পত্র প্রেরন করেন। এরপরেও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ না হওয়ায় ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের সুপারিশ করে চিঠি পাঠান। চিঠিতে গৌরনদীর উত্তর বিল্বগ্রাম বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করেন বর্তমান মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তারপরেও বিদ্যালয়টি জাতীয় করন করা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ১১ বছর ধরে বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের জন্য উপজেলা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সচিবালয় ও মন্ত্রণালয়ে দৌঁড়ঝাপ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পরেছি। বরিশাল-১ আসনের দুইজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যর ডিউলেটারসহ সুপারিশ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনৈতিক দাবি পুরন করতে না পারায় জাতীয়করনের সকল শর্ত পুরন করা সত্বেও বিদ্যালয়টি জাতীয়করনে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের জন্য এলাকাবাসী শিক্ষানুরাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ফয়সল জামিল জানান, হয়তো কাগজপত্রে কোন দূর্বলতার কারনে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই বিদ্যালয়টি জাতীয়করন করা হয়নি। তাছাড়া শিক্ষকরা আমার কাছে কাগজপত্র নিয়ে আসেনি। কাগজপত্র দেখলে হয়তো বুঝতাম কেন জাতীয়করন হচ্ছেনা।