এম.এ হান্নান, বাউফল:
ধান। বাংলাদেশের প্রধান ফসল। ধান চাষকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে দেশের অধিকাংশ মানুষ। বাউফলের মোট জনসংখ্যার আশি (৮০) শতাংশ মানুষ কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট। বর্ষা মৌসুমের শুরুর দিক থেকে কৃষক ব্যস্ত থাকে ধান চাষে। আষাঢ়ে বীজ বপণ আর শ্রাবনে চারা রোপন করা হয়। সম্প্রতিককালের চিত্র ভিন্ন। আষাঢ়ে পর্যাপ্ত বর্ষণ না থাকায় বীজতলা তৈরী করতে বিলম্ব হয়। যার প্রভাবে রোপনেও বিলম্ব। সাধারনত শ্রাবনের শেষ ধান রোপন শেষ। এবছর শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্র চলছে। এই উপজেলায় এখনো রোপন বাকী চল্লিশ শতাংশ ।
তীব্র তাপদাহ। মেঘ বৃষ্টিহীন আকাশ। গত বছর ধানের অসাভাবিক ধরপতন কৃষকের হতাশার অন্যতম কারণ। রবিবার ( ১লা সেপ্টেম্বর) উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের চল কালাইয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তীব্র গরম থেকে স্বস্তির খোঁজে বসে আছে রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায়। অনেকে আবার তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজ করছে মাঠে।
আগলার চর, শৌলার চর, চর মেয়াজান, চর কচুয়া ঘুরে কথা হয় আকতার প্যাদা, আলতাফ হাওলাদার, রাজ্জাক হাওলাদার মোতালেব, কুদ্দুস হাওলাদার, খলিল গাজী, শাহজাদা, জলিল মুন্সী, জসিম ব্যাপারী, মোসারেফ খাঁ, শাহাদুল সহ জন বিশেক কৃষকের সাথে। দীর্ঘ আলাপচারিতায় ফুঠে উঠে তাদের দু:খ দুর্দশা ও হতাশার চিত্র। কথা হয় গত মৌসুমে ধানের অসাভাবিক ধরপতন নিয়ে। শোনা হয় অনেকের স্বপ্ন ভাঙা ও স্বপ্ন দেখার গল্প। জানা যায় অনেকের কৃষি পেশা ছাড়ার কথা।
আকতার প্যাদা আট (৮) একর জমিতে আমন ধান চাষ করবে। পর্যাপ্ত পানি আর শ্রমিক সংকট থাকায় তিন (৩) একর জমিতে চারা রোপন বাকী।
তিনি জানান, স্থানীয় মাপের এক কানি (২৪০ শতাংশ) জমিতে চাষ, শ্রমিক সার ঔষুধ বাবদ খরচ হয় ত্রিশহাজার টাকা। ওই জমিতে ৬০মণ ধান উৎপন্ন হয়। নেয্য দাম না পেলে কৃষকের মরণ ছাড়া কোন উপয় থাকেব না। অপরদিকে এক (১) কানি জমির এক সোনা মূল্য বিশ হাজার টাকা।
রাজ্জাক প্যাদা নামের এক কৃষক বলেন, সাংবাদিক ভাই চিত্বে শান্তি নাই। গত বার মাজা ভাঙছে আর খাড়ায়নি। এবছর আবওহাওয়ার যে অবস্থা! বৃষ্টি না হওয়ায় বীজে পোকার আক্রমন দেখা দিছে। শুরুতেই ধকল। এরপর যদি ধানের দাম না পাই তাহলে তো জীবন শেষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষক জানায় সরকারের কৃষি প্রনদণা কর্মসূচির আওয়াতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের বিনামূল্যে সার বীজ কিটনাশক দেওয়া হয় তা প্রকৃত ক্ষুদ্র চাষীদের কপালে জোটে না। কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট না / প্রয়োজন নেই এমন লোকদের দেওয়া হয় সহায়তা। কেউ কেউ বলেন মুখ চিনে চিনে কৃষি উপকরণ বিতরণ করেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা আরো বলেন, কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা – কর্মচারীর কাছ থেকে কোন প্রকার পরার্মশ পাই না। মাঠ পর্যায়ে কাজ করার নিময় থাকলেও তাঁরা নিয়মতান্ত্রিক কাজ করেন না।
বাউফল উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, এই উপজেলায় কৃষকের সংখ্যা ৫০হাজার। এবছর ৩৬হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার ৬০ শতাংশ জমিতে চাষ করা হয়েছে। স্থানীয় ধানের জাত সহ বিভিন্ন উপশী জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে।
এব্যাপরে বাউফল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আরাফাত হোসেন বলেন, ১৬ জুলাই থেকে ১৫ আগষ্টের মধ্যে আমন ধানের চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। এই মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়া ও কৃষকদের নিজস্ব গাফিলতির কারনে চারা রোপনে বিলম্ব সৃষ্টি হয়েছে।
এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, মূলত স্থানীয় চেয়ারম্যান -মেম্বারগণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী/ কৃষক নির্বাচন করে তাদের মাঝে কৃষি প্রনদণা বিতরণ করার কথা। যদি সেক্ষেত্রে প্রকিৃত চাষীরা বঞ্চিত হয়ে থাকে তাহলে আমাদের করার কিছু থাকে না।