নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের জনপ্রতিনিধিদের অতীত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের তুলনা করে তিনি বলেছেন, ‘লন্ডনে কেউ ছয় মাস থাকলে নির্বাচনের আগে তাদের নিবন্ধন দিয়ে দেয়। ভুয়া ভোটার নেই বলেই তারা ধরে নেয়। আর আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনকে মলম পার্টি, পকেটমার, ব্যাগটানা পার্টি ও ক্যাসিনো মেম্বার নিয়ে কাজ করতে হয়।’
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের যোগদান উপলক্ষে কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ইসি সচিব মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
সিইসি নূরুল হুদা বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, গুলিস্তান মহল্লায় হকারদের কাছ থেকে কেউ টাকা নেন। কিছুদিন পর হয়তো তাকে নেতা হতেও দেখা যায়। এই ব্যক্তি একদিন সংসদ সদস্য হতে পারেন। এই ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে ইসিকে কাজ করতে হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক সময় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এমন করে; সুইজারল্যান্ড, জার্মানিতে এ রকম হয়; আমাদের এখানে হয় না কেন? সেদিন একটা পলিটিক্যাল পার্টি এসে এ কথা বলেছিল। আমি অত্যন্ত নিচু গলায় বললাম কানে কানে- আগে সুইজারল্যান্ড হতে হবে, তারপর। ইউ মাস্ট থিংক গ্লোবালি, বাট অ্যাক্ট লোকালি। তবে সেটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
সিইসি বলেন, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে অনেক কথা বলা হয়। সুইজারল্যান্ডেও কাগজের ব্যালটে ভোট হয়। কিন্তু সেখানে যুদ্ধের মতো বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হয় না। পোস্টারে আকাশ ঢেকে যায় না, বাতাস বন্ধ হয়ে আসে না।
তিনি দাবি করেন, ইভিএমের ফলে এখন আর সেই দশটা হোন্ডা, বিশটা গুন্ডার যুগ নেই। এদের ভাড়া করতে প্রার্থীদের যেতে হবে না। যারা ভোট ছিনতাই করবে, তাদের কাছে যেতে হবে না। আর নির্বাচনে যারা দায়িত্বে থাকেন, তাদের পেছনে যারা টাকা দেয়, তাদের কাছেও যেতে হবে না। একমাত্র ইভিএমই পারে ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের নিয়ে যেতে।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে পাঁচ পরামর্শ মাহবুব তালুকদারের অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবপস্থাপনাকে পাঁচটি ‘নি’ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, প্রথম ‘নি’ হচ্ছে ‘নিশ্চয়তা। এটা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা। এ নিশ্চয়তার অর্থ ভোটার ও রাজনৈতিক দলের আস্থা সৃষ্টি। দ্বিতীয় ‘নি’ হচ্ছে নিরপেক্ষতা। নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান ও ভোট কার্যক্রম চালানোর প্রতিশ্রুতি। কমিশনের পক্ষে এই নিরপেক্ষতা অপরিহার্য। তৃতীয় ‘নি’ হচ্ছে ‘নিরাপত্তা’। এই নিরাপত্তা ভোটার, রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীজনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকরভাবে নির্বাচনকালে কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা দরকার। চতুর্থ ‘নি’ হচ্ছে ‘নিয়ম-নীতি’। নির্বাচনসংশ্নিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে বিধি-বিধান পরিচালনের আওতায় আনা প্রয়োজন। পঞ্চম ‘নি’ হচ্ছে ‘নিয়ন্ত্রণ’। নির্বাচন অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। স্বনিয়ন্ত্রণই নির্বাচন কমিশনের মূল কথা।
তিনি বলেন, সংবিধান বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে যে অপরিমেয় ক্ষমতা দিয়েছে, পৃথিবীর খুব কম দেশের কমিশন এমন ক্ষমতার অধিকারী। এমনকি ভারতের কমিশনও এত ক্ষমতার অধিকারী নয়।
মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ক্ষমতা থাকলেই কেবল হবে না। ক্ষমতার প্রয়োগ না হলে সে ক্ষমতা অর্থহীন। বর্তমান কমিশন তার ক্ষমতার কতটুকু প্রয়োগ করতে পেরেছে, তা সময়ই বিচার করতে পারবে।