নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, ‘আমার কাছের লোক হলেও আপনারা সন্ত্রাসী ও মাস্তানদের কাউকে খাতির করবেন না। কোন মাস্তান, বন্দুকবাজ ও লাঠিয়াল বাহিনীর আমার দরকার নেই। কারণ আমি নিজেই জানি, আমার থেকে বড় মাস্তান আর কেউ নেই।’
‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ উপলক্ষ্যে রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসে জেলা পুলিশ আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পুলিশের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
শামীম ওসমান বলেন, ‘রাতের বেলা ডাকলে এখনও ২ লাখ লোক বের করতে ১ ঘন্টা সময় লাগে। ওই ক্যাপাসিটি আমার আছে। ৭৯ সালে জিয়াউর রহমানকে আটকে রাখার লোক আমরা। কিভাবে আন্দোলন করতে হয় আর কিভাবে আন্দোলন ঠেকাতে হয় আমরা সেটা জানি।’
অতীতের কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘২০০১ সালের আগে পুলিশ ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র না ছিল, তার থেকে বেশি অস্ত্র একা আমার নিজের কাছেই ছিল। তবে আজকে আমার গাড়িতে অস্ত্র আছে কিনা তা আমি নিজেও জানি না। আমি সবসময় মনে করি- আমি বিরোধী দল, আমি সাধারণ মানুষের দল।’
তিনি বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক দর্শন আগে ছিল একরকম। নিজের জন্য করতাম। জিন্দাবাদ শুনতে ভালো লাগতো। ২০০১ সালের পরে আমার এই চিন্তা পরিবর্তন হয়েছে।’
আলোচিত এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘প্রশাসনের মধ্যে দলবাজিটা আমি পছন্দ করি না। আমি মনে করি, আপনি আওয়ামী লীগ করতেন এটা কোন কোয়ালিটি হতে পারে না। আপনি যোগ্যতাসম্পন্ন এটাই আপনার কোয়ালিটি। আমি রাজনীতিবিদ কিন্তু চোর -এমন রাজনীতিবিদ থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। এরা দেশকে খেয়ে ফেলে। নারায়ণগঞ্জে পুলিশ প্রশাসনের কিছু সংখ্যক লোকের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের অন্য কোন দলকে দমন করার জন্য পুলিশের দরকার নেই। নারায়ণগঞ্জে আমি একলাই যথেষ্ট।’
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে সৎ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি একজন জনপ্রতিনিধি সংসদ সদস্য হিসেবে নয়, জনগণ হিসেবেই তাদের প্রত্যেকটি কথায় টের পাই তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে চান। তাদের নিয়ে আমি গর্ব করি।’
সামাজিক অবক্ষয় রোধের গুরুত্ব তুলে ধরে শামীম বলেন, ‘আমার একার পক্ষে নারায়ণগঞ্জকে ঠিক রাখা সম্ভব নয়। আপনাদের সবাইকে নিয়েই নারায়ণগঞ্জকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হবে।’ এজন্য তিনি পুলিশ প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। আলোচনা সভা শেষে কর্মরত অবস্থায় নিহত হওয়া পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে সম্মাননা ও আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।