গহনা তৈরিতে মুক্তার কদর ব্যাপক। প্রাকৃতিক মুক্তার পাশাপাশি চাষের মুক্তাও সমানভাবে জনপ্রিয়। পটুয়াখালীর কুয়াকাটার ধুলাসার ইউনিয়নের চাপলি গ্রামে মুক্তা চাষ করে সাফাল্য পেয়েছেন সুজন হাওলাদার নামের স্থানীয় এক যুবক। একই পুকুরে মাছের সাথে বানিজ্যিকভাবে মুক্তা চাষ শুরু করেন তিনি।
সুজন হাওলাদার বেকারত্ব জীবনকে পরিহার করতে ২০১৯ সালে ইউটিউব থেকে রংপুরের সফল ঝিনুক চাষি লিটনের সহযোগিতা নিয়ে ২০১৯ সালেই পকুরের মিঠা পানিতে শুরু করেন মুক্তা চাষ। প্রাথমিকভাবে ৩০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক তিনি শুরু করে মুক্তা চাষ।
সুজন হাওলাদার জানান, ২০২০ সাল থেকে আমি বানিজ্যিকভাবে ঝিনুক চাষ শুরু করেছি। আমার পুকুরে তিন ধরনের অপারেশনকৃত ঝিনুক আছে। ইমেজ পদ্ধতি: যেখানে ইমেজের ডাইজ বসিয়ে ঝিনুকের ভিতর স্থাপন করা হয়। টিস্যু প্রতিস্থাপন করে রাইচ পাল বা মেন্টাল পদ্ধতি এবং নিউক্লিয়ার্স পদ্ধতি বা গোলাকার মুক্তা এই তিন ধরনের মুক্তার চাষ করেন বলে জানান সুজন হাওলাদার।
সুজন জানান, প্রথামিকভাবে নিজে ট্রেনিং নিয়ে এক হাজার ঝিনুক চাষ করেতে খরচ লাগে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। ঝিনুক শতকরা ৭৫ ভাগ টিকে। আমি ইতোপূর্বে রংপুরের সফল মুক্তা চাষি লিটনের সহযোগিতায় মুক্তা চাষের বিষয় ট্রেনিং নিয়ে মুক্তা চাষের সনদ গ্রহণ করি।
তিনি জানান, দেশের বেকার যুকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আমার এই ফোন নম্বরে ০১৭৬১৫৭৮৮০২ যোগাযোগ করলে আমি তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। এরই মধ্যে মাগুড়া, পাথরঘাটা, বেতাগীসহ বিভিন্ন এলাকার বেকার যুবকদের মাঝে মুক্তা চাষকে ছড়িয়ে দিতে ঝিনুক চাষের ট্রেনিং করিয়েছি।
সুজন হাওলাদারের এই ঝিনুক চাষের সফলতায় এলাকার যুবসমাজ ঝিনুক চাষের প্রতি অগ্রসর হয়েছে। নদীনালা ও পুকুর থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে তা বাছাই করে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে রাখা হয় পানিতে। এর পর ১০ মাস থেকে ১৫ মাসের মধ্যে পাওয়া যায় কাঙ্খিত মুক্তা। ঝিনুকের জন্য বাড়তি কোনো খাবার দিতে হয় না। ক্যালসিয়ামের জন্য প্রতিমাসে একবার করে পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হয়।
মুক্তার পাশাপাশি একই পুকুরে মাছও চাষ করছেন সুজন হাওলাদার। পুকুরে চাষকৃত এক একটি মুক্তা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি করেন সুজন হাওলাদার। একটি ঝিনুক থেকে একবারই জন্ম হয় মুক্তার। তারপর বাকী সেই ঝিনুক দিয়ে তৈরি হয় মাছের খাবার।
সুজন হাওলাদার আরো জানান, চলতি বছরে তার পুকুরে পাচঁ হাজার ঝিনুক আছে। আমি এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা পাইনি। যদি সরকারিভাবে কোনো সহোযোগিতা পাই, তা হলে আমি আমার এই প্রজেক্টকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারব। এত করে আমি যেমন দিগুন লাভবান হবো তেমনি আমাদের দেশও উপকৃত হবে। খুব কম খরচে ঝিনুক চাষে সফলতা পাওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনজ কুমার সাহা জানান, ওই চাষি যে মুক্তা চাষ করেন তা আমার জানা ছিল না। আমার অফিসে মাঠকর্মী কম থাকায় সকল খোজ খবর নেয়া সম্ভব নয়। তাই চাষি যদি আমাদের অফিসে এসে সহযোগিতা চান, তা হলে তার প্রজেক্টের জন্য আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।