বরিশালে অবস্থানরত বিএম কলেজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, হাতেম আলী কলেজ, অমৃতলাল কলেজ, বরিশাল পলিটেকনিক, ইনফ্রা পলিটেকনিক, ইসলামিয়া কলেজ, মহিলা কলেজ, বরিশাল কলেজ শিক্ষার্থীরা মেস ভাড়া মওকুফের জন্য জেলা প্রশাসক, সিটি মেয়র, বিএম কলেজ প্রশাসন ও মেস মালিকদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।
মেস ভাড়া মওকুফের একটি দরখাস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা শেয়ার করছেন।
মেস ভাড়া মওকুফ প্রসঙ্গে আবেদন পত্রে বলা হয়েছে-
#সম্মানিতমেসমালিকগণ
প্রিয় সুধীবৃন্দ,
আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বকেই পর্যুদস্ত করে তুলেছে৷ সেই ভয়াল থাবায় গত মার্চ থেকেই বাংলাদেশ অচল অবস্থায় আছে৷
আপনারা জানেন, বরিশাল শহরে লেখাপড়া করার জন্য বিএম কলেজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, হাতেম আলী কলেজ, অমৃতলাল কলেজ, বরিশাল পলিটেকনিক, ইনফ্রা পলিটেকনিক, ইসলামিয়া কলেজ, মহিলা কলেজ, বরিশাল কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রীরা ছুটে আসে৷থাকার জন্য তারা বিভিন্ন মেসের আশ্রয় নেয়৷
কিন্তু গত মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সকলেই বাধ্য হয়ে মেস ছেড়ে এখন বাড়িতে অবস্থান করছে৷ কিতু ইতিমধ্যে অনেক মেস মালিকই ছাত্রদেরকে মেসভাড়া পরিশোধ করার জন্য নানা ধরনের চাপ দিচ্ছে৷
কিন্তু এই মুহুর্তে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে মেসের ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব না৷ কারণ ছাত্রদের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল টিউশনি, কিন্তু সেই উৎসটাও এখন বন্ধ৷ এদিকে পুরো দেশ লকডাউনে থাকার কারণে অভিভাবকদের আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে আছে৷ অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্যামিলিই কৃষক, দিনমজুর ও সামান্য আয়ের মানুষ৷ গোটা পরিবার এখন বড় ধরনের ক্রাইসিস চলছে।
এমতাবস্থায় আমরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে আছি৷ এই মুহুর্তে মেসভাড়া আমাদেরকে আলাদা পীড়া দিচ্ছে৷
সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, সবকিছু ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে৷ এমতাবস্থায় দেশ লকডাউন থাকার কারণে আমরা চাইলেও মেসে ফিরতে পারছি না৷ কিন্তু মেসে না থেকেও আমাদেরকে ৬ মাসের ভাড়া দিতে হবে৷ যেটা আমাদের মতো নিম্ন আয়ের ফ্যামিলির পক্ষে বহন করা কোনোমতেই সম্ভব না৷
তাছাড়া আমরা তো আর বাড়িতে গিয়ে আরাম করছি না৷ করোনাভাইরাস সংকটে আমরা জীবন-মৃত্যু লড়াই করছি। প্রশাসন নিষেধাজ্ঞার কারণে মেস বন্ধ করা হয়েছে৷ এমতাবস্থায় পুরো মেসব্যবস্থাই তো বন্ধ, তাহলে আমরা টাকা দিব কেন?
এর ফলে আমরা বড় ধরনের বিপদের আশংকায় দিন পার করছি৷তাছাড়া যেহেতু আমরা মেসে থাকছি না,সুতরাং আমরা মেসের ভাড়া কেনই বা দিব??
দেশ যেহেতু লকডাউনে, আমরা যদিও এখন সিট ছেড়ে দেই তাহলে মেস মালিকরা তো আর সিট ভাড়া দিতে পারছেন না৷ অনেকেই উভমুখী এই সংকটে সীট ছেড়ে দিচ্ছে৷
তাই আমরা সকল মেস মালিকদের নিকট দাবি করছি,অনতিবিলম্বে আপনারা এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেসভাড়া মৌকুফ করুন৷
অন্যদিকে কলেজ হোস্টেলে যারা অবস্থান করছে,তাদেরকেও বছরে নির্দিষ্টহারে টাকা পরিশোধ করতে হয়৷ আমরা একই সাথে দাবি উত্থাপন করছি কলেজ হোস্টেলের ভাড়াও ৬ মাসের জন্য মওকুফ করতে হবে৷
বিপদে মানুষের পাশে দাড়ানোই মানবিকতা৷ মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকেই আপনারা আমাদের দাবি মেনে নিবেন বলে আমরা আশাবাদী৷
বরিশালে যারা বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে ছাত্রদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুন, বিভিন্ন অঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলোকেও এই মুহুর্তে পাশে দাড়ানোর আহবান জানাই৷ সকলেই নিজ নিজ জায়গা থেকে দাবি তুলুন৷
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগই শিক্ষার্থীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছে। আমি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন হলে প্রথমে তাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানাবে। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো। শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসনের কাছে মেস ভাড়া মওকুফের আবেদন করতেই পারে। আমি মাধ্যমে হয়ে তা চাইতে পারি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, মেস ভাড়া মওকুফের বিষয়টি সম্পূর্ণ মেস মালিকের এখতিয়ার। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের কোন করণীয় নাই।