জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ সমূহের অর্নাস-মাষ্টার্স কোর্সে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা বেতন বঞ্চনার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।করোনার তান্ডবে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকগণ জীবন জীবিকার কঠিন সমীকরণে। উল্লেখ্য যে,১৯৯৫,২০১০ এবং ২০১৮ তে জনবল কাঠামো সংশোধন করা হলেও এসব শিক্ষকের দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে।তারপরেও দীর্ঘ আটাশ বৎসর হলো শিক্ষকেরা প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র বেতনে কিংবা বেতনহীন অবস্হায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সেবা দিয়ে আসছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি বিধি মোতাবেক এই সকল শিক্ষক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। বিধি মোতাবেক একজন শিক্ষকের নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় এবং নিয়োগ ও মৌখিক পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও ডিজি মহোদয়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা ও সরকারি নীতিমালা মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের শতভাগ বেতন -ভাতা ও সুযোগ সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও সারাদেশে মোট বেসরকারি কলেজের ৯০% কলেজ কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিতে চায় না।
জানা গেছে শিক্ষকদের বেতন ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে দিয়ে থাকে যা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে জীবিকা নির্বাহ করা অসম্ভব। শুধু তাই নয় অধিকাংশ কলেজেই মাসের পর মাস সামান্য টাকাটাও ফান্ডে টাকা না থাকার অযুহাতে বন্ধ রাখা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
মধ্য মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ থাকে,তাহলে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায় করা অসম্ভব। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ কলেজে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা টিউশন ফির সিংহভাগই চলে যায় অধ্যক্ষ এবং গভর্নিং বডির প্রভাবশালীদের পকেটে,প্রতিনিয়ত চলতে থাকে নামে বেনামে ভাউচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মহোৎসব। কোন শিক্ষক বেতনের কথা বললেই শিক্ষকদের নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে চলতে থাকে হয়রানি করার অপচেষ্টা।
এমতাবস্থায় মানবতার মা, সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধন চায় প্রায় ৫০০০ ননএমপিও অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকগণ। কারণ এমপিওভুক্ত না করে কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে আবারো ছেড়ে দিলে এই স্তরের শিক্ষকগণের আর বেঁচে থাকার কোন সুযোগ থাকবেনা। সারা দেশে ৩৫০ টি এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজে কর্মরত প্রায় ৫০০০ ননএমপিও অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক রয়েছেন।যাদের এমপিওভুক্ত করতে সরকারের বার্ষিক ১৪৮ কোটি টাকা লাগবে।১৯৯২ সাল থেকে অদ্যাবধি শুধুমাত্র জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত না করার কারণে এসকল শিক্ষক এমপিওভূক্তি হতে পারছেন না। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। একই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রী (পাশ) শিক্ষকেরা এমপিওভূক্ত হতে পারেন এবং মাদ্রাসা পর্যায়ে ফাজেল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) শ্রেণির শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হতে পারেন।
অথচ শিক্ষানীতি ২০১০ -এর উচ্চশিক্ষা র কৌশলে বলা আছে যে,যেসব কলেজে ৩ বছর মেয়াদি স্নাতক (পাশ) কোর্স আছে,সেখানে পর্যায়ক্রমে চার বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান কোর্স চালু করা হবে এবং চার বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান ডিগ্রিকে প্রান্তিক ডিগ্রি হিসেবে গণ্য করা হবে। কাজেই অর্নাস-মাষ্টার্স শ্রেণির শিক্ষকদের এমপিওভূক্ত না করার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারেনা। তাদের এই দুর্ভোগের কারণে শুধুমাত্র শিক্ষক বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়, সুষ্ঠু পাঠদানের অভাবে শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছে এবং মান হারাচ্ছে উচ্চশিক্ষার। যার দায়ভার রাষ্ট্র ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোন ভাবেই এড়াতে পারেনা।
এসকল শিক্ষককে জনবলকাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভুক্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক দুইজন মহাপরিচালক আর্থিক সংশ্লেষ সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের দুইটি নিদের্শনা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি মন্ত্রণালয় ।তবে আশার বাণী হলো যে,”এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো /২০১৮ “পর্যালোচনা ও সংশোধন কমিটির সম্মানিত সদস্যগণ ননএমপিও অনার্স মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকগণকে জনবলে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিও দেয়ার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন বলে বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে।
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে উচ্চ শিক্ষাদানে নিয়োজিত এই সকল শিক্ষকের হৃদয়ের বোবা কান্না উপলব্ধি করে তাদের কে দ্রুত জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভূক্তকরণ এবং বিশেষ আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা করা সময়ের দাবি।নিগৃহীত শিক্ষকগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী,শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকারের নীতি নির্ধারকগণের দিকে চেয়ে আছেন জনবলে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি অনুদানের(এমপিও) ঘোষণা ও এমপিওভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আর্থিক প্রণোদনা পাবার আশায়। লেখক:হারুন অর রশিদ যুগ্ম আহবায়ক, বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি।