বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

জেনে নিন কাবা শরিফে গিলাফ তৈরির অজানা তথ্য

জেনে নিন কাবা শরিফে গিলাফ তৈরির অজানা তথ্য

কালো গিলাফ। পবিত্র কাবা শরিফের কালো গিলাফ। যাকে কিসওয়া বলা হয়। কালো গিলাফে আবৃত কাবা শরিফ মুসলিম উম্মাহর আবেগ-অনুভূতির সর্বোচ্চ স্থান।

এ কালো গিলাফ যেন পবিত্র কাবা শরিফকে অপার্থিব গভীর ভালোবাসায় জড়িয়ে আছে। পবিত্র কাবা শরিফকে ঘিরে রাখা এ গিলাফের আর্ট ও সেনার সুতোয় বোনা ক্যালিগ্রাফি মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে তৈরি হয় ভালোলাগা, ভালোবাসা ও অনুভূত হয় অন্যরকম এক মায়াবি আকর্ষণ।

কবে থেকে কাবা শরিফে গিলাফ ব্যবহৃত হয় তার সুস্পষ্ট ইতিহাস জানা না গেলেও একসময় কাবা শরিফের বাহিরের মতো ভেতরেও গিলাফে আবৃত করা হতো কাবার দেয়াল। যা এখন করা হয় না।

সৌদি আরবের বিখ্যাত উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. নাসের বিন আলি আল-হারেসি তথ্য থেকে জানা যায়-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়েও পবিত্র কাবা শরিফে গিলাফ ব্যবহৃত হতো না। কাবা ঘরে গিলাফ ব্যবহারে সঠিক তারিখ জানা না গেলেও পবিত্র নগরী মক্কা ও তায়েফে প্রাপ্ত শিলালিপিতে খচিত আরবি ক্যালিগ্রাফি সূত্রে জানা যায় যে, ৪০ হিজরি সনে দিকে আরবি ক্যালিগ্রাফি উন্নত স্টাইল তখন অধিক প্রচলিত ছিল।’

বর্তমান সময়ে যে স্টাইলের আদলেই পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফে সোনার সুতোয় আরবি ক্যালিগ্রাফি খচিত হচ্ছে। কাবা ঘরের গিলাফে আরবি নান্দনিক ক্যালিগ্রাফি উপস্থাপনের বিষয়ে ড.মুহাম্মদ বিন হুসাইন আল-মাওজানের গবেষণায় যে তথ্যে উঠে এসেছে, তাহলো-

মিসরের মামলুক সালতানাতের আমলে কাবার ভেতর ও বাইরে আলাদাভাবে গিলাফে আবৃত করা হত এবং তাতে আরবি ক্যালিগ্রাফি দিয়ে অলঙ্কৃত করা হত। আর ৭৬১ হিজরিতে মামলুক আমলের সুলতান নাসের হাসান বিন মুহাম্মদ বিন কালাউনের সময় কাবার ভেতরের ক্যালিগ্রাফিখচিত গিলাফের একখন্ড এখনও সংরক্ষিত আছে।

তবে কাবার গিলাফের ভেতর-বাইরে উভয় অংশে শৈল্পিক এবং নয়নাভিরাম ক্যালিগ্রাফির অলঙ্করণ শুরু করেন তুর্কি উসমানিয় সুলতানগণ। তাদের সময়ে ক্যালিগ্রাফির সবচেয়ে নান্দনিক শৈলী সুলুস ও জালি সুলুসের ব্যবহার শুরু হয়।

মামলুক সুলতানদের সময়ে রায়হানি ও মুহাক্কাক শৈলীর কায়রো ধারায় ক্যালিগ্রাফি ব্যবহৃত হতো। তবে কাবার চারপাশে মসজিদে হারামে কুফি কাইরোয়ানি, জাহরি-নাবতি লিপির অলঙ্করণ ছিল।

১৩৪৬ হিজরিতে কাবা শরিফের গিলাফ তৈরিতে বিশেষ কারখানা তৈরির বিষয়টি সামনে আসে এবং তৎকালিন সৌদির বাদশাহ আব্দুল আজিজ আল-সৌদ-এর নির্দেশ ক্রমে গিলাফ বা কিসওয়া তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

Gilap-1

১৩৪৬ সালে ওই কারখানা নির্মিত অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ক্যালিগ্রাফিতে সজ্জিত কালো গিলাফ দ্বারা আবৃত করা হয় পবিত্র কাবা শরিফ। বিশ্ববিখ্যাত ক্যালিগ্রাফারদের এক সম্মেলন আহ্বান করা হয়। সেখানে সুলূস লিপিতে গিলাফ অলংকৃত করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

বর্তমান সময়ের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার মুখতার শোকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তার তথ্য থেকে আরও জানা যায়, ‘কাবা শরিফের গিলাফের বাইরের কালো কাপড়ে স্বর্ণমন্ডিত রেশমি সুতা দিয়ে দক্ষ কারিগর দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করা হয়।’

তারপর ঝারনিখ কালি দিয়ে প্রথমে কাপড়ে ক্যালিগ্রাফির আউটলাইন দেয়া হয়, তারপর কারিগরগণ হরফের ভেতর রেশমি সুতার মোটা লাইন বসিয়ে স্বর্ণের সুতা দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে হরফ ফুটিয়ে তোলেন। গিলাফের কালো জমিনে স্বর্ণের সুতার ঢেউ খেলানো বুননের ক্যালিগ্রাফির সোনালি আভা এক জান্নাতি আবেশ ছড়িয়ে দেয়।

বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদের সময় থেকে কাবা শরিফের গিলাফের প্রধান ক্যালিগ্রাফারের দায়িত্ব পালনকারী সৌদি বংশোদ্ভূত আব্দুর রহিম আমিন বোখারি দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বাদশাহ ফাহদ বিন আবদুল আজিজের সময় থেকে গিলাফের প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে সৌদি বংশোদ্ভূত আবদুর রহিম আমিন বোখারি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ক্যালিগ্রাফি হিসাবে কোরআনের আয়াত, আল্লাহতায়ালার গুণবাচক নাম বিশেষ নকশা আকারে উপস্থাপন করা হয়।

হজরে আসওয়াদের ওপর অংশে আল্লাহু আকবর ক্যালিগ্রাফিসহ বর্তমানে গিলাফের অধিকাংশ ক্যালিগ্রাফি মুখতার শোকদারের হস্তলিখিত।

প্রতি বছর কাবা শরিফে গিলাফ পবিত্র হজের দিন সকাল তথা ৯ জিলহজ পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে কাবা শরিফে গিলাফ নির্মাণে যেসব জিনিস-পত্র প্রয়োজন হয় তাহলো-

পবিত্র নগরী মক্কার উম্মুল জুদ এলাকায় গিলাফ তৈরির বিশেষ কারখানা অবস্থিত। এ কারখানায় দায়িত্ব প্রাপ্ত ম্যানেজার হলেন মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ। তার দেয়া তথ্যে কাবা শরিফের গিলাফের হিসাব-
– নতুন গিলাফ তৈরি করতে ১২০ কেজি সোনার সূতা, ৭০০ কেজি রেশম সূতা ও ২৫ কেজি রূপার সূতা লাগে।
– গিলাফটির দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার এবং প্রস্থ ৪৪মিটার।
– গিলাফের সেলাই কাজে অংশ গ্রহণ করে দেড় শতাধিক অভিজ্ঞ দর্জি।
– গিলাফ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ মেশিন।

উল্লেখ্য যে, সোনা ও রূপা নির্মিত সূতা দ্বারা কালো সিল্কের কাপড়ের ওপর কুরআনুল কারিমের আয়াত অংকনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কাবা শরিফের গিলাফ তৈরির পর তা বিশেষ বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায় তাপ দেয়া হয়। যাতে তা প্রচণ্ড রোদ ও তাপের কারণে অবিকৃত থাকে। পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফ তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech