দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়েন প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী। দীর্ঘ ছয় মাসেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা অটোপাসের দাবি জানিয়েছেন।
তাদের মতে, ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় দীর্ঘ সেশন জটের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া যারা চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত, পরীক্ষা না হওয়ায় তারা চাকরিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অংশ নিতে পারছেন না। এ অবস্থা কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে আর কবে ক্লাস-পরীক্ষা হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই অটোপাসই একমাত্র উপায়।
এ বিষয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত রিফাত ইভা জানান, ফাইনাল ইয়ারে এসে সেশনজটে পড়তে হবে সেটা কল্পনাতেও ছিল না। গত ছয় মাস ধরে বাসায় বসে আছি। পরীক্ষা না হওয়ায় সার্টিফিকেট পাচ্ছি না। কোথাও চাকরির জন্য আবেদনও করতে পারছি না। তাই দ্রুত অটোপাস দিয়ে আমাদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেয়া হোক।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ইলিয়াস শান্ত জানান, কয়েক মাস আগে আমাদের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে সে পরীক্ষা নেয়া হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা দেয়ার মতো পরিস্থিতি বা প্রস্তুতি কোনোটাই নেই। কলেজের পক্ষ থেকে অনলাইন ক্লাস নেয়া হলেও সেটি পর্যাপ্ত না। এ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া হলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। তাই অটোপাস দিয়ে এই অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ দেয়া হোক।
জানা গেছে, গত মার্চ মাসেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় দুই থেকে পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা আটকে যায়। তখন থেকেই শিক্ষার্থীরা অপেক্ষায় রয়েছেন কবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে। এর পর প্রায় ১০ মাস কেটে গেলেও তাদের অপেক্ষা শেষ হয়নি। এই অবস্থায় অনেকের মধ্যেই উৎকণ্ঠা আর হতাশা দানা বাঁধছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, চতুর্থ বর্ষ শেষ না হলে সনদ দেয়া হবে না। আর সনদ না মিললে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করা হবে না।
এদিকে অটোপাসের দাবিতে সম্প্রতি গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে অটোপাস দিতে বিভিন্ন কলেজের বিএ (সম্মান) ও চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার্থীরা এই দাবি জানান।
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস কোর্স, দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষ, মাস্টার্স ফাইনাল এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে এসব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়। ডিগ্রি পাস কোর্সে প্রতিটি বর্ষে ৩৪টি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অটোপাসের কোনও সুযোগ নেই। এটা প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা বললে তখন সেটা বিবেচনা করা যেত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। আমরা শুধু করোনার প্রকোপ কমার অপেক্ষা করছি। পরিস্থিতি একটু উন্নতি হলে আমরা একদিনও কালক্ষেপণ করবো না। ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার্থীদের অর্ধেক পরীক্ষা হয়ে গেছে। অবশিষ্ট পরীক্ষা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই নিয়ে নেয়া হবে।