মোকলেসুর রাহমান মনি:
বঙ্গোপসাগর বিধৌত পর্যটন শহর কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষনার আগেই সম্ভাব্য করোনা মহামারী উপেক্ষা করে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারনায় সরগরম হয়ে উঠেছে পৌর এলাকা। দলীয় প্রগতিকে নির্বাচন হওয়ার কারনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় সমর্থন পেতে গনসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে লবিং তদবীরে ব্যস্ত সময় পার করছেন করেছেন । আগামী রবি অথবা সোমবার নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করতে পারে নির্বাচন কমিশন, আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপে পটুয়াখালী জেলার একমাত্র কুয়াকাটায় নির্বাচন হতে পারে এমন ধারনায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা রঙ্গিন ব্যানার ও পোষ্টার সাঁটানো এবং সমাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। তারা তাদের প্রত্যাশার কথা প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যে ভোটাররাও শুরু করেছেন চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষন। বর্তমান পৌর পরিষদের আমলের উন্নয়ন, দূর্নীতি, অনিয়ম নিয়ে যেমনি আলোচনা চলছে তেমনি আগামী দিনে কোন প্রার্থীকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন হবে-এমন ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করার পক্ষে বেশির ভাগ ভোটার অভিমত প্রকাশ করেছেন। তবে পৌর এলাকায় বৃদ্ধ ও তরুন ভোটারদের চাহিদা আলাদা। তরুন ভোটারদের প্রত্যাশা পর্যটন শহর কুয়াকাটায় সৃষ্টিশীল উচ্চশিক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হোক যারা কুয়াকাটাকে সারাদেশের কাছে তুলে ধরবেন। এদিকেমেয়র প্রার্থীরা দলের টিকিট পেতে ভোটারদের পাশাপাশি জেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃস্থানীয়দের কাছে ধরণা দিচ্ছেন। সেই সাথে চালাচ্ছেন জোর গ্রুপিং-লবিং। তবে নির্বাচনী তফসিল বা নির্বাচন শুরু না হলেও কোন দলের মনোনয়ন পাবেন আর কে মেয়র হচ্ছেন ভোটারদের মাঝে এমন সব আলোচনা পর্যালোচনায় সরব হয়ে উঠেছে পৌর এলাকার চা স্টল গুলো। মুল আলোচনায় শেষ পর্যন্ত দু’দলের কার মাথায় উঠবে দলীয় মনোনয়নের মুকুট সেটিই দেখার অপেক্ষায় কুয়াকাটা পৌরবাসী। সবকিছু মিলিয়ে সাগরপাড়ের এ জনপদের পৌর নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বইছে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকলেও বিএনপির প্রার্থী সংকটে রয়েছে। তফসিল ঘোষনার আগে সব দলের ব্যানার ফেস্টুনও পোস্টারে সমগ্র কুয়াকাটা সয়লাব হলেও বিএনপি এসব বিষয়ে আভাস মিলেনি।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানা গেছে, বিএনপি একক প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামবেন। নৌকার মনোনয়ন পেলেই বিজয় সুনিশ্চিত এমন ধারণা থেকে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। ফলে দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া সেইসব নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়িসহ অভিযোগের পাহাড় গড়ছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবারের কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে কৌশলী হয়ে মাঠে কাজ করবে বলে দলীয় সুত্রে আভাস মিলেছে। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে হাফ ডজন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে নানা তদবির চালাচ্ছেন। তারা হলেন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ: বারেক মোল্লা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল রহমান টিটো, কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গাজী মো.ইউসুফ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর মোঃ শাহ আলম হাওলাদার এবং যুগ্ন সম্পাদক সম্পাদক সাংবাদিক বাবু অনন্ত মুখার্জী মাঠে রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কয়েকটি বলয় তৈরী হয়েছে, দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রমে। একই সাথে বিগত পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে তৃনমূল ও জেলা থেকে থেকে মনোনয়ন পেয়ে শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য খেলায় মনোনায়ন বঞ্চিত পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মনির আহম্মেদ ভূইয়া এবারও শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একক প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে হাজী নুরুল ইসলাম হাওলাদারের। তিনি বিগত পৌর নির্বাচনেও পাখা প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এতসবের মাঝে সব দলের ভোট ব্যাংকে আঘাত হানতে পারেন জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া মো: আনোয়ার হাওলাদার। তিনি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন বলে ভোটারদের অভিমত। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক রেষারেষিকে কাজে লাগিয়ে তিনি সুবিধা নিতে পারেন বলে মন্তব্য ছিল অনেকের। আনোয়ার হাওলাদার বিগত নির্বাচনে জাতীয় পাটি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এছাড়া বিএনপির দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে থাকায় প্রার্থী সংকটে রয়েছে বলে মন্তব্য ছিল সমালোচকদের। গত নির্বাচনে অংশ নেয়া পৌর বিএনপির আহবায়ক আবদুল আজিজ মুসুল্লী বার্ধক্য সমস্যায় ভুগছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা এমন আশংকায় বিএনপির অন্য নেতারা নির্বাচন করতে আগ্রহী নয় তবে নির্বাচনের অনূকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলে হলে বিএনপি কেউ প্রার্থী হতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সবাই বর্তমান মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা, তার ভাই লতাচাপলি ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী মোল্লা, ব্যবসায়ী হোসেন মোল্লা, আরেক ভাই মোশারফ মোল্লা, মেয়র পুত্র মাসুদ মোল্লা সহ তাদের নিজস্ব বাহিনী, মেয়র আবদুল বারেক মোল্লার পরিবারের অতীত কর্মকান্ড, জলদস্যুতা, ভূমি দস্যুতা, বালি মহাল দখল, বিভিন্ন কমিশন বানিজ্য, সাব মেরিন ক্যাবল কেলেঙ্কারি, আলীপুর মৎস্য বন্দরের টোল কেলেঙ্কারি, পৌর শহরে সাবঠিকাদারী নিয়ে দুই বছর যাবত নলকুপ না বসানো, ড্রেনেজ নির্মানে অনিয়ম, জলাবদ্ধতা নিরসন ও সৈকত এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে কার্যকরী ব্যবস্হা না নেয়া। করোনাকালীন সময়ে ভিজিএফ চাল আত্মসাৎ, কর্মচারীদের অনুদান না দেয়া, সৈকত ও পুরাতন বৌদ্ধ মন্দির সরকারি ও ব্যক্তিগত জমি দখল করে নিজ নামে মার্কেট নির্মাণ সহ, সাংবাদিকদের মারধর, হত্যার হুমকিসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সকল প্রার্থীরা মাঠে প্রচারনা চালাচ্ছেন। তবে মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা সব সময়ই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলেন এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, আমি ৪০ বছর যাবত এই জনপদে রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধি করছি তাই আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু লোক ইস্যান্বিত হয়ে প্রচারনা চালাচ্ছেন।
কুয়াকাটা পৌরসভা সুত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা পৌরসভা যাত্রা শুরু হয় ১৫ডিসেম্বর ২০১০সালে। ২৫ টি গ্রামের সমন্বয়ে ৯টি ওর্য়াড নিয়ে গঠিত পৌরসভার আয়তন ১২,৭৫ বর্গ কিলোমিটার মোট ভোটার সংখ্যা ১২০০০ হাজার। ২০১১ সালে ৩৪ নং লতাচাপলী মৌজার ১১৪০দশমিক ৫৫একর জায়গা নিয়ে পৌরসভাটি পুর্নমর্যাদা লাভ করে। এরপর থেকেই পৌরসভার কার্যক্রম চলে আসছিল নির্বাচিত মেয়র দিয়ে। বর্তমানে ১২,৭৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১২ হাজার ভোটার নিয়ে হতে যাছে নির্বাচন।
কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব হুমায়ুন সিকদার বলেন, বিএনপিতে প্রার্থী সংকট নেই। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা পর একক প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব তালুকদার বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলএবং কুয়াকাটার উন্নয়নে কাজ করছে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে তাই দলে একাধিক প্রার্থী থাকতে পারে বা একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইতে পারে, তবে তৃর্ণমূলের ভোটের ভিত্তিতে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তিনিই নির্বাচন করবে। তার বাইরে কেউ প্রার্থীতা দিলে তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন বলেন জেলা আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ টিম বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অতীত বর্তমান কার্যকলাপ, দলের জন্য অবদান এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকল্প বাস্তবায়নে সঠিক ভুমিকা পালন করতে পারবেন এমন প্রার্থীকেই বঙ্গবন্ধু কন্যা নেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ মনোনায়ন দিবে।