দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারীরা যত বড় রুই-কাতলা হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এসব অপরাধীদের ছাড় দিলে চলবে না।
প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়।
আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৯ ডিসেম্বর রেখেছেন। এই সময়ের মধ্যে বিচারিক আদালতে পিকে হালদারের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রতিবেদন, মামলার এফআইআর ও সম্পত্তি-অর্থ জব্দের আদেশ আদালতে দাখিল করতে দুদকে বলা হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো.খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
গত ১৮ নভেম্বরর একটি জাতীয় দৈনিকে পিকে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এ আদেশ অনুসারে দুদক বুধবার একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেখানে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
শুনানিতে আদালত বলেন, যারা দুর্নীতিবাজ, যারা অর্থ পাচার করে তাদের ছাড় দিলে চলবে না। এ সময় খুরশীদ আলম খান বলেন, অবশ্যই। তখন আদালত বলেন, তারা যত বড় রুই কাতলা হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং আইনের জালে যারা আটকে যায় এদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সবার উচিত হলো দেশের প্রোপার্টি রক্ষা করা। এটাতো আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে। কাজেই শুধু কোর্ট করবে অন্যরা করবে তাতো না, সবাইকে করতে হবে।
আদালত দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে আরো বলেন, তারা যেন আইনের জালে ধরা পড়ে সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। জাতির জনক স্বপ্ন দেখেছিলেন এ দেশকে সোনার বাংলা গড়ার। কাজেই ওনার যে স্বপ্ন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
এক পর্যায়ে আদালত বলেন, খুব আনফরচুনেট আড়াইমাস হয়ে গেলো একটা অর্ডার হলো না। তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, আমি যোগাযোগ করেছি। জানিয়েছি।
আদালত বলেন, আপনি বলবেন, এটা নিয়ে উচ্চ আদালত কনসার্ন। জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, জি, এটা কনভে করবো (এটা জানিয়ে দেব)।
প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে দেশে ফিরতে প্রশান্ত কুমার হালদার এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের কাছে একটি পত্র দেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছেন তিনি কখন কীভাবে আসবেন তা জানাতে। পরে ২০ অক্টোবর একটি আবেদন করেছে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘ্নে দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে ২৫ অক্টোবরের একটি টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়
২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এ বিষয়ে এই আদেশ দেন। আদেশে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রেফতার নিশ্চিত করতে বল হয়। পরে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন অথরিটিরি চিফ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি এ নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু ২৪ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানিয়েছেন- পিকে হালদার ২৫ অক্টোবর রোববার দেশে ফিরছেন না।