ডেস্ক রিপোর্ট ॥
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুুুদ্র সৈকত কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা পর্যটন শহর কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে প্রথমবারের মত কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাাপতি বর্তমান মেয়র আবদুুল বারেক মোল্লা। দখিনা জনপদের মানুষের কাছে এক সময়ে জলদস্যু হিসেবে পরিচিত আবদুল বারেক মোল্লা ১৯৯৮ সালে লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, জলদস্যুতা, জমি দখল, বালুমহাল দখল, জেলেদের কাছ থেকে চাদাঁ আদায়, জলদস্যুদের সাথে মুক্তিপন বিনিময় করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান মোল্লা পরিবার। লতাচাপলি ইউনিয়ন ভেঙ্গে ২০১২ সালে কুয়াকাটা পৌরসভা হওয়ার পর প্রথম ২০১৫ সালের ভোটারবিহীন প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ ভাই আনছার উদ্দীন মোল্লাকে বানান লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। দুই ভাইয়ের ক্ষমতার দাপটে জিম্মি হয়ে পরে সাগর পাড়ের সাধারণ মানুষ। পিতা আবুল হাসেম মোল্লার তিন সংসারে জন্ম নেয়া আট ভাই সবাই কোটিপতি হওয়ার নেশায় দখল বানিজ্যে মেতে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী নামে পুলিশের মাছ ছিনতাই, করোনাকালীণ গরীবের ত্রানের চাল আত্মসাৎ, সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের মারধর, হত্যার চেষ্টা, কুয়াকাটা পৌর শহরের বেরিবাঁধের বাইরে বস্তিগড়ে বছরে কোটি টাকা ভাড়া আদায়, আওয়ামী লীগের অফিসের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দেয়া, খাসজমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ, ব্যক্তিমালিকানা জমি দখল করে মার্কেট বানিয়ে কোটি টাকা জামানত নিয়ে আত্মসাৎ, পৌর কর্মচারীদের করোনাকালীন সরকারি সাহায্য বন্টন না করা, মাস্টার প্লান উপেক্ষা করে পৌর শহরের বাহিরে জমি বিক্রির কমিশন বানিজ্যের জন্য আলীপুরে বাস টার্মিনাল নির্মানের চেষ্টা, পৌরসভার সরকারি যানবাহন রক্ষনাবেক্ষন না করে ফেলে রাখা, সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্বেও মাস্টার প্লান উপেক্ষা করে উৎকোচ নিয়ে স্হাপনা নির্মানের অনুমতি, পর্যটন এলাকায় ময়লায় ভাগারে পরিনত করা, পৌরসভার ড্রেনেজ নির্মানে অনিয়ম, সড়কের অপ্রতুলা, পৌর সভায় সকল উন্নয়ন নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে করা, টিউবওয়েল কেলেঙ্কারি সহ ৫ বছরে শত কোটি টাকার সরকারি বরাদ্ধের নয়ছয় করে পৌরবাসকে সেবা বি ত করার বিভিন্ন অভিযোগে পৌরবাসীর আস্থা হারিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছেন ঐ জনপদের ২২ বছরের জনপ্রতিনিধি আবদুল বারেক মোল্লা। তাছাড়া দুই ভাইয়ের ক্ষমতার দাপটে অন্য ভাই মোশারেফ মোল্লার বালু মহাল দখল করে ব্যবসা, আবুল হোসেন মোল্লার সাবমেরিন ক্যাবল কেটে দিয়ে সারাদেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ফোরকান মোল্লার জমি দখল বানিজ্য, পুত্র মাসুদ মোল্লার সন্ত্রাসী লালন করার কারনে বার বার বিতর্কিত হওয়া ও দলীয় পদে থেকে দলীয় মনোনায়নে পৌর মেয়র হওয়ার পর নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করা এবং বিভিন্ন অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে প্রধানমন্ত্রী সহ দলীয় বিভিন্ন ফোরাম ও সরকারি দপ্তরে অভিযোগের পর অভিযোগে বিপর্যস্ত হয়ে পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৃৃনমূলের ভোট কেনা, দলীয় নেতাদের গাড়ী উপহার, নগদ টাকা ছড়াছড়ি, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিনিয়োগে বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচন করার গুঞ্জনের পর এবার জোড় করে টাকা গছিয়ে জন সাধারনের ভোট কেনা নিশ্চিত করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন প্রভাবশালী মেয়র প্রার্থী আব্দুল বারেক মোল্লা। অনিয়ম দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি, বিরোধীদের দমন নিপিড়ন, প্রধানমন্ত্রীর নামে মাছ ছিনতাই, জমি দখলের পর এবার নির্বাচনী মাঠ দখল করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগত সন্ত্রসীদের এনে একাধিক হোটেলে রেখেছেন। পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় এখন ভোটারের তুলনায় বহিরাগতদের সংখ্যা বেশি।
ইতিমধ্যে পাঁচ হাজার ভোটারকে টার্গেট করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাম ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করা হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে। এসব ভোটারদের ক্ষেত্র বিশেষ টাকা দিয়ে অথবা সন্ত্রাসী কর্তৃক ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা হবে বলে জানায় সূত্রটি।
সপ্তাহ জুড়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে টাকার লেনদেনের গুঞ্জণ বইছে বেশ জোরেশোরেই। পৌরসভার ১ নং ওর্য়াডের খাজুরা এলাকার ৬০ ঘর ও ৮০ ঘর এলাকার অনেকের সাথে কথা বলে এই তথ্যের সত্যতা মিলেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদেও নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন ভোটাররা। নির্বাচনী মাঠে প্রচারনায় থাকা পটুয়াখালী জেলা, কলাপাড়া উপজেলা ও পার্শ¦বর্তী লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর ও মহিপুর এলাকার ইউনিয়ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা কর্মী ও জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান মেয়র আঃ বারেক মোল্লা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি হয়েও ভোটারদের মন জয় করতে পারেননি, এটি ভাবনার বিষয়। ওইসব নেতাকর্মীদের মতে, প্রভাবমূক্ত এবং সুষ্ঠু ভোট হলে আঃ বারেক মোল্লার জয় নিয়ে প্রচুর শঙ্কা রয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীর সাথে আলাপ করলে তারা জানান আমরা শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলে জেলা ও উপজেলার নেতাদের সাথে দিনরাত পরিশ্রম করে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছি কিন্তু দলীয় প্রার্থীর ব্যক্তি ও পারিবারিক ইমেজ শূন্যের কোটায় নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আল্লাহ ভাল জানেন ফলাফল কি হবে?
কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির কয়েকজন নেতা জানান দক্ষিনা ল ঘিরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এত উন্নয়নের পরও আজ জেলা, উপজেলার সমস্ত নেতা কর্মী দিনরাত পরিশ্রম করেও জয়ের নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছেনা এজন্য তারা জেলা ও উপজেলার কয়েকজন নেতাকে দোষারোপ করে বলেন দলীয় প্রার্থী মনোনায়নে ভুল সিদ্ধান্তের কারনে নৌকার ভোট থাকা সত্বেও একটি পরিবারের দুঃশাসন থেকে জনগন মুক্তি পাওয়ার আশায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
পৌরসভার তরুন ভোটারদের সাথে আলোচনা করলে তারা অনেকেই জানান বিগত ৫ বছরে সারাদেশে এত উন্নয়ন হলেও কুয়াকাটায় উন্নয়ন নেই। পর্যটন শহর কুয়াকাটায় স্বাস্থ্যসেবা, সেনিটেশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, আধুনিক পর্যটন নগর গড়ার জন্য মাস্টার প্লান ও কুয়াকাটাকে সারাদেশে পরিচয় করানোর জন্য যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য কুয়াকাটায় যে শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি দরকার ছিল বিগত পাচ বছরে সেটা পৌরবাসী পায়নি। আমরা সারাদেশের কাছে দূর্নাম ছাড়া কোন সুনাম অর্জন করতে পারিনি। রনি নামে একজন আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান বর্তমান মেয়র জমি বিক্রি কোটি কোটি টাকা কমিশনের আশায় কুয়াকাটা পৌর বাসটার্মিনাল শহরের বাইরে আলীপুরে নিয়ে গেছেন যার ফলে কুয়াকাটায় হোটেল ব্যবসায় ধস নামতে পারে। কারন হিসেবে বলেন বাস টার্মিনাল নির্মিত হলে কুয়াকাটা শহরে বাস আর ঢুকতে পারবে না ফলে পর্যটক কুয়াকাটার চাহিদা হারিয়ে ফেলবে।
এদিকে নির্বাচনের ব্যাপারে ১নং ওয়ার্ডের আঃ রব মাঝী জানান, মেয়র প্রার্থী আঃ বারেক মোল্লার পাঁচ ভাই পৃথক পৃথক ওয়ার্ড গুলোর দায়িত্ব নিয়ে সন্দেহের তালিকায় থাকা প্রতি ভোটারকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতে বাধ্য করছেন।
মহিপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মেয়র প্রার্থী আঃ বারেক মোল্লার ছেলে মাসুদ মোল্লার নেতৃত্বে বিভিন্ন ইউনিয়নের যুবলীগ নেতারা সহিংসতাসহ মাঠ পর্যায়ে প্রতিপক্ষের কর্মীদের মারধর ও ভোটারদের আতঙ্কে রাখার কৌশল নিয়েছেন বলেও সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের তরুণ ভোটার ইমরান জানান, কেউ টাকা নিয়ে এলে না ধরে উপায় নেই। টাকা ফেরৎ দিলে অহেতুক রোষানলে পড়তে হবে। তার চাইতে টাকা নিলেও সময়মত উপযুক্ত প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে ঠিক করেছেন।
বহিরাগতদের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত কুয়াকাটায় অবস্থানের মিশন নিয়ে মাঠে কাজ করছেন বলে ভোটারদের সাথে আলাপকালে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওইসকল বহিরাগত কর্মীরা সাধারণ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে নির্বাাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে মিছিলে অংশগ্রহণেও বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। ৯ নং ওয়ার্ডে নির্বাচনকালীন অবস্থান নিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন তার ছোট ভাই লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার উদ্দিন মোল্লা।
প্রতিপক্ষ জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হাওলাদার সকল বাঁধা বিপত্তির পরেও মাঠে রয়েছেন। অপর দুই মেয়র প্রার্থী ধানের শীষের আঃ আজিজ মুসুল্লী ও হাত পাখা প্রতীকের হাজী নুরুল ইসলাম দায়সারা গোছের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচনী সংহিসতা ক্রমশবাড়ছে। প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনা ও অনৈতিক আবদারে সাধারণ ভোটার রয়েছে আতঙ্কে।
লতাচাপলী ইউনিয়ন ইউপি সদস্য আবুল হোসেন কাজী বলেন, মেয়র আর ছোট ভাই ইউপি চেয়ারম্যান এবং মেয়রের ছেলের জুলুম অত্যাচারে মানুষ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমি তাদের পক্ষে প্রচারণায় না যাওয়ায় পুলিশের সামনে আমাকে ধাওয়া করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল দিনভর ও রাতে কুয়াকাটায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আঃ বারেক মোল্লা উল্টো অভিযোগে বলেন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জগ প্রতীকের আনোয়ার হাওলাদার হত্যা মামলার আসামী ও সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ার হাওলাদার বলেন, আমার বিজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে আঃ বারেক মোল্লা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে কালোটাকা ছড়াচ্ছে, আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন তিনি আরো বলেন বলেন কুয়াকাটার মানুষ একটা পরিবারের ২২ বছরের জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, দূর্নীতি ও জবর দখলের কবল থেকে মুক্তি ও পরিবর্তনের পক্ষে যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল বারেক মোল্লা নিশ্চিত পরাজয় জেনে পটুয়াখালী, কলাপাড়া, মহিপুর, বরগুনা, আমতলী, তালতলীর বিভিন্ন এলাকার বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনে আমার কর্মিদের উপর হামলা করে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। কিন্তু তিনি এবং তার ভাইদের অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম, দূর্নীতি, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পৌরবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে গত নির্বাচনের মত এবার গনরায় ছিনিয়ে নিতে পারবেনা। তিনি প্রশাসনের কাছে জনগনের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনী রিটার্নিং অফিসার ও পটুয়াখালী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান খলিফা বলেন, কালো টাকা বিতরণের বিষয় থাকলে সেটি ফৌজদারী অপরাধ তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি।