বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

আমতলীর পৌরশহর রক্ষার জন্য ৭২৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প

আমতলীর পৌরশহর রক্ষার জন্য ৭২৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প

বরগুনার আমতলীর সুবান্দী, রামজী ঘুঘুমারী খাল সংস্কার ও উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী বেড়ি বাঁধ, চাওড়া ইউপির ঘটখালী বেড়িবাঁধ পুন:নির্মান ও আমতলী পৌর শহর রক্ষা বাধ নির্মানের জন্য বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৭২৬ কোটি টাকা ডিপিপি (ডকুমেন্ট অফ প্রজেক্ট প্রফর্মা) জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবটি চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে সচিবের অনুমতির অপেক্ষায়। বরগুনা পাউবো সূত্রে জানা যায় সচীব অনুমতি দিলেই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করা হবে।

সুবান্দী, রামজী ঘুঘুমারী খাল সংস্কার ও উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী বেড়ি বাঁধ, নদী ভাংগন রোধ চাওড়া ইউপির ঘটখালী বেড়িবাঁধ পুন:নির্মান নদী ভাংগন রোধ ও আমতলী পৌর শহর রক্ষা বাধ নির্মানের জন্য বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৭২৬ কোটি টাকা ডিপিপি (ডকুমেন্ট অফ প্রজেক্ট প্রফর্মা) জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।

এ প্রকল্পের মধ্যে বেড়ি বাধ নির্মান. পুনঃনির্মান শহর রক্ষাবাধ নির্মান, সুবান্ধী খালে ১০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মান লোচা খালে ৫ ব্যান্ডের স্লুইজ, সোনাগজা খালে ৩ ব্যান্ডের স্লুইজ, সেনের হাট বাজারে ২ ব্যান্ডের স্লুইজ ও পূর্বচিলা ২ ব্যান্ডের স্লইজ নির্মাণ, ছুরিকাটা মহাসড়ক, হলদিয়া বাজার সংলগ্ন, বলইবুনিয়া খালের গোড়ায়, লক্ষিরখালের গোড়ায়, চন্দ্রাপাতাকাটা ও কাউনিয়া বাঁধসহ ১০ টি স্থানে কালভার্ট নির্মাণ, পশ্চিম ঘটখালী ও কৃষ্ণনগর গ্রামে ২টি আউটলেট নির্মাণ,ও কচুরীপানা উত্তোলনের জন্য বরগুনা পাউবো ৭২৬ কোটি টাকার ডিপিপি (ডকুমেন্ট অফ প্রজেক্ট প্রফর্মা) জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ।

উল্লেখ্য বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া, হলদিয়া, কুকুয়া, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার উপরদিয়ে প্রবাহিত ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০০ মিটার প্রস্থ চাওড়া- সুবান্দি নদী কচুরীপানায় ভরপুর হয়ে গেছে। পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দুষিত হওয়ায় চার ইউনিয়ন ও পৌরসভার লাখো মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে আমতলীর চাওড়া ও পায়রা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের হাত থেকে আমতলী শহরকে রক্ষায় সংযোগস্থল চৌরাস্তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করে। কালের বিবর্তনে চাওড়া নদী মরা নদীতে পরিনত হয়। ত্রিভুজ আকৃতির ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০০ মিটার প্রস্থ এ নদীটি উপজেলার হলদিয়া, কুকুয়া, চাওড়া, আমতলী সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩০টি গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত। নদীর ভৌগলিক অবস্থানের কারনে সুবন্দি অংশে রামনাবাঁধ নদী, ঘুঘুমারী অংশে টিয়াখালী ও আমতলীর অংশে পায়রা নদীর সাথে সংযোগ রয়েছে। প্রকৃতিক জলোচ্ছাস ও লবনাক্ততার হাত থেকে মানুষ ও সম্পদ রক্ষায় ২০০৯ সালে রামনাবাঁধ নদীর একাংশ সুবন্দি নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করে। চাওড়া ও সুবন্দি নদীর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সুবান্ধী পয়েন্টে ২০১৫ সালে দু’ব্যান্ডের স্লুইজ নির্মাণ করেছে। দুব্যন্ডের একটি স্লুইজ নির্মান করলেও ৩০ কিমি লম্বা এবং প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার প্রশস্ত খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে দুব্যন্ডের স্লুইজ কোনভাবেই যথার্থ নয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাধ নির্মানে লবন পানি প্রবেশের অজুহাত তুললেও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন নদীগুলোর লবনাক্ততা বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ের স্টাডি বলছে, পায়রা বিষখালী এবং বলেশ্বর মোহনায় মার্চের প্রথম থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত লবনাক্ততা থাকলেও তালতলীর পর পায়রা নদীতে লবনাক্ততা সহনীয় মাত্রার এবং বগি বাজারের পর থেকে লবনাক্ততা খুব কম। আন্দারমানিক এবং রামনাবাদ চ্যানেলের লোন্দা পয়েন্ট পর্যন্ত মার্চের প্রথম থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত লবনাক্ততা থাকলেও সুবন্ধি পয়েন্টে লবনাক্ততা নেই কালেভদ্রে দেখা গেলেও তা খুবই সহনীয় মাত্রার সিডরের সময় সুবান্ধি খোলা ছিল। সুবান্ধি ও জুলেখার স্লুইজ থেকে আমতলী পর্যন্ত চাওড়া হলদিয়া খালের দুপাড়ে ২১টি কার্লভার্ট ও ইনলেটসহ উচু রাস্তা রয়েছে। যে কারনে সিডরে এসব এলাকায় তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

এদিকে ১৯৬৭ সালে জুলেখা খালে পাঁচ কপাট ও উত্তর টিয়াখালী খালে পাঁচ কপাট এবং ঘুঘুমারিতে এক কপাটের স্লুইজ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুবান্দির তিনটি জলকপাট থেকে পানি নিস্কাসনের কারনে নদীর ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পানি’র স্বাভাবিক প্রবাহ রয়েছে। জুলেখা, উত্তর টিয়াখালী ও ঘুঘুমারি খালের জল কপাট বন্ধ করে একটি প্রভাবশালী মহল মাছ চাষ করে ও জাল দিয়ে আটকিয়ে মাছ ধরে। এছাড়াও জুলেখার স্লুইজ খালের লক্ষী নামক স্থানে তিনটি বাঁধ, উত্তর টিয়াখালী স্লুইজের বাঁধসহ খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছে।

অপরদিকে নদী সংলগ্ন ১০টি খাল প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ এবং খাল দখল করে স্থায়ী বাড়ী ঘর নির্মাণ করছে। এতে নদীর পশ্চিম, দক্ষিণ ও পুর্ব দিকের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ১৫ কিলোমিটারের কচুরীপানা আটকে জন দুভোর্গ চরম আকার ধারন করেছে। নদীর দু’পাড়ের মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। কচুরীপানার কারনে পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পরিবেশ দুষিত হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ওই খালের পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পরেছে। এ খালের দু’পাড়ের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জনদুর্ভোগে পরিনত হয়েছে। ফলে খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরন ও অবৈধ দখল করা খাল মুক্ত করার দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার লাখো মানুষ।

হলদিয়া গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরী ভিত্তিতে কচুরীপানা অপসারণ করা দরকার। তিনি আরও বলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ বন্ধ খালগুলোর বাঁধ কেটে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবী জানাই।
চন্দ্রা গ্রামের কৃষক মো. সুমন মিয়া বলেন, খালের কচুরীপানা জমে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এ পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দুর্গন্ধে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। অতিদ্রুত কচুরীপানা অপসারনের দাবী জানাই।

চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান খান বাদল মুঠোফোনে বলেন, চাওড়া ইউনিয়ন বাসীর দীর্ঘদিনের দাবী সুবান্ধী খাল সংস্কার, ঘটখালী বেড়ি বাধ পুন: নির্মান ও নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার। দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চাওড়া বাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ প্রকল্প বাস্ত বায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।

আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, চাওড়া সুবন্দি খালের পানি প্রবাহের জন্য যে প্রকল্প দেয়া হয়েছে তা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন,খালের শাখা প্রশাখার বাঁধগুলো কেঁটে স্লুইজ ও কালভার্ট নির্মাণ করে নৌ পরিবহন চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার আলম মুঠোফোনে বলেন, চাওড়া-সুবান্দি নদীর পানি নিষ্কাশন ও কচুরীপানা অপসারন ওয়াকওয়ে নির্মানের ও আড়পাঙ্গাশিয়া, ঘটখালী ও আমতলী পৌরশহর রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭২৬ কোটি টাকা ডিপিপি (ডকুমেন্ট অফ প্রজেক্ট প্রফর্মা) জমা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব মহোদ¦য়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমতলী উপজেলার সুবান্ধীবাদ সংশ্লিষ্ট মানুষসহ উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে জানান।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech