বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে কি হবে না তা নিয়ে সংকটের শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভর্তি পরীক্ষার ঠিক ১১ দিন আগে ট্রেজারার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যের পদ শূন্য হওয়ায় এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও উপাচার্য ড. একেএম মাহাবুব জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত তথ্য সরকার অকিবহাল। যেহেতু আমার মেয়াদ ৭ তারিখ শেষ হচ্ছে সেকারনে ওইদিন পর্যন্ত কি হবে বা হতে পারে তা বলতে পারবো। তারপরের বিষয়ে কথা বলা আমার একতিয়ারে নেই। তবে আমি এটুকু বলতে পারি ভর্তি পরীক্ষার যতটুকু প্রস্তুতি দরকার তা গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে সচেতন মহল মনে করেন, উপাচার্য বা ট্রেজারার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা অসম্ভব। অন্তত ভর্তি পরীক্ষারমত র্স্পশকাতর বিষয়ে হেলাফেলা করলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে বির্তকে ফেলতে পারে।
শিক্ষার মান, প্রশাসনিক কাঠামো ধরে রাখা ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখন উপাচার্য ও ট্রেজারার না থাকা অবস্থায় পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি কঠিন বলেও মত দিয়েছেন অনেকে। ওদিকে নতুন উপাচার্য আসার তথ্যে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্দোলনেরমুখে পরে ছুটিতে যাওয়া সাবেক উপাচার্য এসএম ইমামুল হকের অনুসারী কর্মকর্তারা। কয়েকজন ইতিমধ্যে ঢাকায় ‘গুঞ্জন ওঠা উপাচার্য’র সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
গুঞ্জন রয়েছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিসি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই দুইজন হলেন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব ও অন্যজন অ্যাকাউন্টিং বিভাগে অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। যদিও উভয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বর্তমান কর্মস্থলে।
এরমধ্যে ড. মাহবুবের বিরুদ্ধে ভর্তি জালিয়াতি, আর্থিক অনিয়ম, যৌন হয়রানি এবং ড. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘ভূতুরে বিল’ করার অভিযোগে তদন্ত চলছে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও কোন আন্দোলনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের দাবী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করেছে। এবারও কোন ‘সমালোচিত’ ব্যক্তিকে উপাচার্য করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ঠিক থাকবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিবে।
ওদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এসএম ইমামুল হকের কাছ থেকে যারা ‘অবৈধ’ সুবিধা গ্রহণ করে প্রশাসনের উর্ধতন পদ আগলে রেখেছেন তারা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠায় আতংকে রয়েছে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকরা।
অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী মোর্শেদ আবেদিন, উপ-পরিচালক (অর্থ) সুব্রত হালদার, সেকশন অফিসার রফিক সেরনিয়াবাত এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য। জানা গেছে, বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. একেএম মাহাবুব যেন অতিরিক্ত সময়ের জন্য কোন দায়িত্ব না পান সেজন্য তার বিরুদ্ধে কৌশলে কাজ করছেন ইমামুল হকের সুবিধাভোগীরা। এটিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলছেন।
শিক্ষার্থী মাহমুদুল বলেন, দুর্নীতিবাজ ও স্বেচ্ছাচারী ছাড়া যে কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য হিসেবে গ্রহণ করা হবে। আমরা শুরু থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আসছি। কোন ব্যক্তির সাথে বিরোধ নেই। এই শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক দুর্নাম হচ্ছে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারনে। তারা নিজেদের পদোন্নতি, বাড়তি সুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে রুপ দিতে চায়।
অপর আরেক শিক্ষার্থী ফাতিহা বিন রুমি বলেন, দলাদলির কারনে বিশ্ববিদ্যলয়ের মান ও নাম ক্ষুন্ন হয়। শুধু যে দুর্নীতিবাজ সাবেক উপাচার্য ইমামুল হক স্যার গেছেন তিনিই নয় তার দোসরদেরও অপসারণ করা উচিত।
কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রের কারনে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মধ্যে পরলে তাদের আগে থেকেই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান এই শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন শিক্ষক নেতা জানান, সারাদেশেই বিশ্ববিদ্যালয় সংকটের মুখে রয়েছে। এরকারণ শীর্ষ পদে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট কাটাতে উপাচার্য পদে শিক্ষাবিদ নিয়োগ দেওয়া উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১১ সালে কার্যক্রম শুরু হওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অনেকটা বির্তকমুক্তভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন। বিগত কোন উপাচার্য এমনভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারেননি। তাছাড়া মাত্র কয়েকমাসের দায়িত্বে তিনি বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করেছেন। ফলে নতুন করে কোন ছাত্র আন্দোলনের সূত্রপাত হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক উপাচার্যের পদে থাকা এসএম ইমামুল হক শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করার অভিযোগে লাগাতর আন্দোলনের মুখে ট্রেজারার প্রফেসর ড. একেএম মাহবুবের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সরকার এসএম ইমামুল হকের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর ফলে এতদিন ট্রেজারারই উপচার্যের চলতি দায়িত্ব পালন করেছেন।
কিন্তু আগামী ৭ অক্টোবর ট্রেজারের চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে আগামী ১৮, ১৯ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু উপাচার্য বা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে পরীক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে নতুন করে সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে।