চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নিজ দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন নিয়ে বৈঠক করেছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। দেশটির জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বসে তিনি চাইছিলেন পরিস্থিতির হাল ধরতে।
ম্যাক্রোঁ সেই সময়টায় চেয়েছিলেন তৃতীয় পর্যায় লকডাউন না দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে। অন্তত কোন কোন একটা সুবিধাজনক সুরাহা করতে চাইছিলেন তিনি।
কিন্তু সেই সময় থেকেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্যাসটেক্স বিষয়টির বিরোধিতা করে আসছিলেন।
সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাস মহামারীর তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে এক মাসেরও বেশি সময়ের জন্য ফের লকডাউনে যাচ্ছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তৃতীয় দফার একই লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়র্টাস।
গেলো সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্যাসটেক্স বলেছেন, এবারকার লক ডাউন দ্বিতীয়টির মতো খুব কঠোর হবে না।
তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ প্রশাসন এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
বর্তমানে ফ্রান্সজুড়ে রাত্রিকালীন যে কারফিউ আছে তা বলবৎ থাকবে। দিনের আলো কাজে লাগাতে এখন থেকে কারফিউ আগের চেয়ে একঘণ্টা পরে, সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হবে।
দেশটির সরকার এমনিতেই করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির শ্লথগতি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
এখন তার সঙ্গে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আতঙ্ক যোগ হয়েছে।
ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকাকে নিরাপদ ও কার্যকর বলে অভিহিত করার পর স্থানীয় সময় শুক্রবার থেকে ফ্রান্স টিকাটির প্রয়োগ ফের শুরু করতে যাচ্ছে।
ক্যাসটেক্স বলেছেন, টিকাটি যে কার্যকর তা দেখাতে তিনি নিজেই ভ্যাকসিন নেবেন।
গত জানুয়ারি সেসময় ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, যে করেই ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু সংক্রমণের হার কোনোভাবেই রোধ করতে না পারায় অবশেষে লকডাউন জারি করতে বাধ্য হলেন তিনি।
জঁ ক্যাসটেক্স এক বিবৃতিতে জানান, করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ চলমান রয়েছে দেশে। যত নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে তার ৭৫ শতাংশই ব্রিটেনে আবিষ্কৃত করোনার ধরণে আক্রান্ত।
ফ্রান্সের হাসপাতালগুলোর আইসিইউ-তে এখন অতিরিক্ত রোগীর চাপ। প্যারিসের প্রতি ১ লাখ বাসিন্দার ৪০০ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এই মহামারি আরও খারাপ দিকে মোড় নিচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব এখন এই সংক্রমণকে রোধ করা।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার নতুন করে ৩৫ হাজার মানুষের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যা দ্বিতীয় ঢেউ চলার সময় সর্বোচ্চ ছিল।
ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া সামাল দিতেই দেশটিকে ১ মাস লকডাউনে থাকতে হবে।
নতুন লকডাউনের নিয়ম অনুযায়ী, সেলুন, কাপড়ের দোকান এবং আসবাবপত্রের দোকান বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও বইয়ের দোকান খোলা রাখা যাবে। স্কুল খোলা থাকবে। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে যাওয়া যাবে না।