আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
পায়রা নদীর পানি লবনাক্ততা ভরে গেছে। এতে উপকুলীয় অঞ্চলের মানবদেহ, প্রাণীকুলে ও কৃষিতে বিরুপ প্রভাব পরেছে। আগামী আউশ চাষ নিয়ে সঙ্কায় পরেছেন কৃষকরা। দ্রুত নদ নদীর লবনাক্ততা দুর না হলে উপকুলীয় অঞ্চলের জমি চাষাবাদ অনুযোগী হয়ে পড়বে বলে ধারনা করছেন সচেতন নাগরিকরা।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ পানি না দেয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের নদ নদীতে উজানের পানির চাপ নেই। বিধায় সাগরের লবনাক্ত পানি নদ-নদীর শাখা প্রশাখার প্রবেশ করছে। তিনি আরো বলেন, গত ২৫ বছরে শাখা নদী গুলোতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
জানাগেছে, গত বছর চৈত্র মাসের শুরুতে অমাবশ্যার জোঁতে সাগরের লবনাক্ত পানি পায়রা নদী ও শাখা নদীতে প্রবেশ করে। এরপর থেকে গত এক মাস ধরে লবনাক্ত পানিতে উপকুলীয় অঞ্চল ছড়িয়ে পড়েছে। লবনাক্ত পানি উপকুলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ায় মানব দেহ, প্রাণীকুল ও কৃষিতে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। মানবদেহে লবনের সহনীয় মাত্রা ১৩৮ মিলি মোল/ লিটার। কিন্তু নদ নদীতে লবনের মাত্রা অনেক বেশী। এতে উপকুলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে পানি বাহিত রোগ ডায়েরিয়া। কৃষি জমিতে বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। লবনাক্ত পানিতে নিম্নাঞ্চলের রবি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সঙ্কা দেখা দিয়েছে আগামী আউশ চাষে। লবন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাটিতে অতিরিক্ত লবনাক্ততার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষক আউশ ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। আগামী মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ নিয়ে দুশ্চিতায় পরেছে কৃষকরা।
এদিকে লবনাক্ত পানি উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলী সংলগ্ন পায়রা নদী ও শাখা নদীতে প্রবেশ করায় মানব দেহে পানি বাহিত রোগ ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পরেছে। গত ১৬ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক হাজার ২৫ জন ডায়েরীয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এ তথ্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানাগেছে। সরকারী হিসেবে ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা এক হাজার হলেও বে-সরকারী মতে উপজেলায় ডায়েরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচগুন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
অপর দিকে পায়রা নদীতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকুলীয় জেলে ও কৃষক পরিবারের মাঝে। কুষি জমিতে লবনাক্ততার মাত্রা চার ধরনের। প্রথম ০-২ ডিএস /মিটার, মধ্যম মাত্রা ২-৪ ডিএস/মিটার, উচ্চ মধ্যম ৪-৬ ডিএস/ মিটার, এবং সর্বোচ্চ ৬-৮ ডিএস/মিটার। প্রথম, মধ্যম মাত্রায় ফসল সহনশীল। উচ্চ মধ্যম মাত্রার লবনে কিছু ফসল হলেও কিন্তু সর্বোচ্চ মাত্রার লবনাক্ত জমিতে ফসল হয়না। আমতলী উপজেলায় ৫৫০০ হেক্টর জমি আগে থেকে লবনাক্ত। বর্তমানে পায়রা নদী ও শাখা-প্রশাখা নদীর পানিতে লবনাক্ততার বৃদ্ধি পাওয়ার এ জমির পরিমান আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম। ০-৬ পিপিটি মাত্রার লবন পানিতে মাছের উপর কোন প্রভাব ফেলে না। কিন্তু পায়রা নদীর পানির লবনাক্ততার মাত্রা ৩.০৫ পিপিটি। এতে পায়রা নদীর মাছের উপর লবনাক্ততায় কোন প্রভাব ফেলছে না বলে ধারনা করছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোসাঃ হালিমা সরদার।
আমতলী উপজেলার বালিয়াতলি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, লবন পানির কারনে আউশের বীজতলা প্রস্তুত করতে পারছি না। নদী, খাল-বিলের পানিতে শুরুই লবন আর লবন। এ পানি দিয়ে জমিতে সেচ দিলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোসাঃ হালিমা সরকার বলেন, পায়রা নদীতে লবনাক্ত পানি প্রবেশ করার পর পরই পানিতে লবনের মাত্রা পরীক্ষা করেছি। তাতে পায়রা নদীর পানিতে লবনের মাত্রা ৩.০৫ পিপিটি। এতে নদীর মাছের উপর কেন প্রভাব ফেলছে না। লবনের মাত্রা ৬ পিপিটির উপরে উঠলে পায়রা নদীতে বসবাসরত মাছের জন্য ক্ষতিকর।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, পায়রা নদ ও শাখা-প্রশাখা নদীতে লবনাক্ত পানি প্রবেশ করায় আগাম আউশ আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর পানি দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করলে বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, উপজেলায় ৫৫০০ হেক্টর জমি লবনাক্ত রয়েছে। এর উপর গত এক মাস ধরে পায়রা নদীর লবনাক্ত পানি খাল-নদী নালায় প্রবেশ করে লবনাক্ত জমির পরিমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুল মোনায়েম সাদ বলেন, মানবদেহে লবনের সহনীয় মাত্রা ১৩৮ মিলি মোল/লিটার। প্রচন্ড তাপদাহ, পানিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি ও পায়রা নদীর পানিতে রোটা ও ভিবিও কলোরা ভাইরাসের জীবানু ছড়িয়ে পরেছে। ওই পানি যারা ব্যবহার করছে তারাই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।