এম.এ হান্নান,বাউফল:
পটুয়াখালীর বাউফলে প্রমত্তা তেতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ‘বিছিন্ন ইউনিয়ন চন্দ্রদ্বীপ’, সর্বস্ব হারিয়ে কাঁদছে মানুষ। নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে শতাধিক ঘর বাড়ি ও শতশত একর ফসলি জমি। ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেক। ঠাঁই নিয়েছেন সরকারি আশ্রায়ন প্রকল্প ও সরকারি খাস জমিতে। বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসল। বর্ষ মৌসুমের আগে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের বড় একটি অংশ বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের কাছে চন্দ্রদ্বীপের জনগণের দাবি,‘ ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়ি বাঁধ চাই’।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের খেয়াঘাট থেকে শুরু করে দক্ষিণ পশ্চিম দিকে দিয়ারা কচুয়া, পূর্ব দক্ষিণে চর ওয়াডেল ও চরব্যারেট এলাকায় তেতুলিয়ার তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে’ সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে স্বাভাবিকের তুলনায় ভয়াবহ রূপ নেয় তেতুলিয়ার ভাঙন। ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, চরয়াডেল হামিদিয়া জামে মসজিদসহ প্রায় ৫শ একর ফসলি জমি। নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে চর রায়সাহেব আশ্রয়ন প্রকল্প-১,২ ও খাস জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন ৫০টি পরিবার। কেউবা আবার চলে গেছেন অন্যত্র। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ চর ওয়াডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
নদীর গতিপথ পরির্বতন, যথাযথভাবে নদী শাসন না করা ও নদীতে অবৈধ বেহুন্দি জাল পেতে স্রোতে বাঁধা সৃষ্টি করায় ভাঙন বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
চন্দ্রদ্বীপের দক্ষিণ দিয়ারা কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জামাল হোসেন বলেন,‘ সব হারিয়েছি। শুধু বাড়িটুক আছে। তাও হয়েতো কয়েকদিনে মধ্যে হারাতে হবে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোথায় যাব, কোথায় থাকব কিছুই জানি না।
চরওয়াডেল গ্রামের বাসিন্দা মো.মনির হোসেন বলেন,‘ অনেক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনে রোধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমাদের বাঁচার কোন পথ থাকবে না। ‘আমরা ত্রাণ চাই না,টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় গত ‘আম্ফানে’ প্রায় দেড় কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’ ক্ষতি হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফসল।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন,‘ নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন চন্দ্রদ্বীপ। এখানে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। যাদের সবাই জেলে, শ্রমিক ও কৃষি পেশায় নিয়োজিত। নদী ভাঙনে অনেক পরিবার ভিটা মাটি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি রবিশষ্য নষ্ট হয়ে যায়। চন্দ্রদ্বীপকে বাঁচাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তররের কাছে টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণের আবেদন করছি।
ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকির হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন,‘ উপজেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিছিন্ন নদী বেষ্ঠিত ইউনিয়ন চন্দ্রদ্বীপ। চন্দ্রদ্বীপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ না থাকায় জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ওখানকার মানুষ। বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে।