আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
যেই বয়সে বই খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে সংসারের হাল ধরেছে এতিম শিশু শ্রমিক নুর জামাল (১২)। লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভাব অনাটনে তা আর হচ্ছে না তার। খেয়ে না খেয়ে খুপরী ঘরে বিধবা মাকে নিয়ে দিনাতিপাত করছে সে। ঘটনাটি ঘটেছে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কালীবাড়ী গ্রামে। এভাবে আমতলী উপজেলায় ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। এই সকল শিশুদের ঝুকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখার দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
জানাগেছে, ২০১০ সালে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কালীবাড়ী গ্রামের নাছের মৃধা দুরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্ত হয়ে একমাত্র শিশু পুত্র নুর জামালকে রেখে মারা যান। শিশু পুত্র নুর জামালকে নিয়ে অসহায় হয়ে পরে বিধবা সেলিনা বেগম। সহায় সম্বল বলতে শুধু স্বামীর রেখে যাওয়া একটি ছাপরা ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। মানুষের সাহায্য সহযোগীতা এবং ভিক্ষা ভিত্তি করে জীবন চালায় সে। আস্তে আস্তে নুর জামাল বড় হয়। মা সেলিনা তাকে কালীবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়। ওই বিদ্যালয়ে নুর জামাল পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। ২০২০ সালে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস শুরু হলে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। আর লেখাপড়া হয়নি শিশু নুর জামালের।
এরপর সংসারের ভার এসে পড়ে শিশু নুর জামালের কাঁধে। মাসিক দুই হাজার টাকা বেতনে আমতলী পৌরসভার মীর শহিদুল ইসলামের দুলালের ট্রাকে হেল্পার হিসেবে কাজ নেয়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবদি কাজ করতে হয় তাকে। দুই হাজার টাকা বেতনে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে শিশু নুর জামাল ও তার মা সেলিনা বেগমের। এদিকে বাবার রেখে যাওয়া খুপরী ঘরে মা ছেলে বসবাস করছে। বৃষ্টি আসলেই ঘর পানিতে ভেসে যায়। শিশু নুর জামাল আক্ষেপ করে বলেন, এতো মানুষ সরকারী ঘর পায় আমি এতিম আমাকে কেউ একটি ঘর দেয় না। এই জগতে এতিমের কেউ নেই। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভাব অনাটনে লেখাপড়া ছেড়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাকে। একটি ঘর হলে মাকে নিয়ে ভালো ভাবে বসবাস করতে পারতাম।
শুধু নুর জামাল নয় এভাবে শতশত শিশু নুর জামালের মত ইটভাটা, অটোরিক্সা ও দিন মজুরীসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে আনাচে কানাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিশ^ শিশু শ্রম বিরোধী দিবসে নুর জামালসহ সকল শিশু শ্রমিকদের কষ্ট লাঘবে সমাজের সকলকে এগিয়ে আসার দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
শিশু নুর জামালের মা সেলিনা আক্তার কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, “মোর এতোটুকু এতিম পোলাডারে কাম হরতে পাঠানো লাগে কি হরমু? সরকারী এতো কিছু দেয় মুই কিছুই পাইনা। ঘর নাই। ঘুপরী ঘরে থাহি। বিধবা অইয়্যাও কোন ভাতা পাইনি।
মোরো যদি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা একখানা ঘর দিতো হ্যালে মুই পোলাডারে লইয়্যা শান্তিতে থাকতে পারতাম”।
নুর জামালের ট্রাক মালিক মীর শহীদুল ইসলাম দুলাল বলেন, শিশু নুর জামাল আমার ট্রাকে শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। যা পায় তা দিয়ে ওর সংসার চালাতে হয়। তিনি আরো বলেন নুর জামালের বেতন ছাড়াও কিছু বকসিস পায় তা দিয়ে কোন মতে মা ছেলের সংসার চলে।
শ্রমিক আব্দুর রব প্যাদা ও কামাল আকন বলেন, শিশু নুর জামাল যে বয়সে সংসারের হাল ধরেছে ওই বয়সে আমরা লেখাপড়া করেছি। এতোটুকু বয়সে নুর জামাল অনেক কষ্ট করে।
বে-সরকারী সংস্থা এনএসএস নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, ইটভাটা, অটো রিক্সাসহ বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ কাজে শিশুরা জড়িত। এই ঝুকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমতলী মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোসাঃ আফরোজা সুলতানা বলেন, শিশুদের সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, নুর জামালের মায়ের খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।