আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রামণ বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনে বাজারে ক্রেতা কম থাকায় পশু নিয়ে শঙ্কায় আমতলী উপজেলার ৪৪৩ খামারী। করোনা সংক্রামণ স্বাভাবিক না হলে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় খামারী ও ব্যবসায়ীরা।
আমতলী প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানাগেছে, ৬ হাজার ১’শ পশুর কোরবারীর চাহিদার বিপরীতে উপজেলায় ৮ হাজার ৭’শ ৫৮ টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। পশু মোটাতাজাকরণ ৪’শ ৪৩ টি খামার ও পারিবারিক ৬ হাজার ৫’শ ৫৭ টি খামারে ৭ হাজার ১’শ ১৯ টি গরু, ২’শ ৫৩ টি মহিষ,১ হাজার ৩ ’শ ৬৬ টি ছাগল ও ২০ টি ভেড়া রয়েছে। চাহিদার তুলনায় ২ হাজার ৬’শ ৫৮ টি পশু বেশী আছে। এর মধ্যে গরু ১ হাজার৮’শ ৮২ টি। খামারীরা প্রতিদিন এ পশুগুলোকে খৈল, ভুসি,কুড়া ও কাচা ঘাস খাওয়াচ্ছেন। ভালো লাভের আশায় খামারিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। খুব যত্ন সহকারে পশুর দেখভাল করছেন। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে সংক্রামণ বিস্তার রোধে পশুর ক্রেতা কম থাকায় এবং চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশী হওয়ায় বাজারে পশুর দাম অনেক কমে গেছে। ফলে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় খামারী ও ব্যবসায়ীরা এমন ধারনা ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান হাওলাদার। এতে পশু নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন উপজেলার ৪’শ৪৩ পশু মোটাতাজাকরণ ও ৬ হাজার ৫’শ ৫৭ পারিবারিক খামারী।
দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ পশুর হাট আমতলী, গাজীপুর বন্দর, চুনাখালী বাজার ও কলাগাছিয়ায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, পশুতে বাজার সয়লাব। বাজারে ক্রেতা কম। ক্রেতা কম থাকায় গরুপ্রতি গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে গেছে। পশু নিয়ে খামারী ও ব্যবসায়ীরা বাজারে আসলেও তেমন ক্রেতা পাচ্ছে না।
ব্যবসায়ী মজিবর ও হানিফ মিয়া বলেন, লকডাউন শুরুর এক সপ্তাহ পূর্বে এক লক্ষ ৬৫ হাজার টাকায় দুইটি ষাড় ক্রয় করেছি। ক্রেতারা ওই দুই ষাড়ের দাম বলছেন এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। তিন সপ্তাহ হাটে এনেও বিক্রি করতে পারিনি। লাভতো হবেই না, মুলধর নিয়ে দুচিন্তায় আছি। তারা আরো বলেন, হাটে ক্রেতা আসছে না, আর যারা আসছে তারা পশুর দাম বলছে না।
আমতলী গাজীপুর বন্দরের গরু ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান হাওলাদার বলেন, কোরবানী উপলক্ষে এখন পর্যন্ত দুইটি গরু বিক্রি করেছি। তাতে কোন লাভ হয়নি। এখনো খামারের ১৭ টি গরু রয়েছে। তা নিয়ে দুচিন্তায় আছি। তিনি আরো বলেন, করোনার কারনে বাজারে ক্রেতা কম। গত বছরের তুলনায় এ বছর গরু প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
টেপুরা গ্রামের খামারী কবির ফকির বলেন, ৪ টি গরু বিক্রির জন্য বিভিন্ন হাটে নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু বিক্রি করতে পারছি না। বাজারে ক্রেতা কম আসছে। যারা আসছে তারা দাম বলছে না। কি হয় বলা মুশকিল।
ব্যবসায়ী আফজাল বলেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে অনেক বেশী গরু আসায় দাম কমে গেছে। তিনি আরো বলেন, লকডাউনে তিন বাজার ঘুরেও ৫টি গরুর একটিও বিক্রি করতে পারিনি।
আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী জহিরুল বিশ^াস বলেন, বাজারে পশুর দাম কম। গত বছরের তুলনায় গরু প্রতি ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, একটি গরু ৮০ হাজার টাকায় ক্রয় করেছি। ওই গরু গত বছর মুল্য ছিল অন্তত ৯০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা।
আমতলী পশু হাটের ইজারাদার ও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, পশুতে হাট সয়লাব । করোনার কারনে এ বছর পশুর দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম। তিনি আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর গরু প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
আমতলী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা অভিজিত কুমার মোদক বলেন, আমতলীতে চাহিদার তুলনায় কোরবানীর পশুর উৎপাদন বেশী। ৬ হাজার ১’শ পশুর কোরবারীর পশুর চাহিদার বিপরীতে উপজেলায় মোটাতাজকরণ ও পারিবারিক ৭ হাজার খামারে ৮ হাজার ৭’শ ৫৮ টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কৃত্রিমভাবে পশু মোটাতাজাকরণ এবং রোগাক্রান্ত পশু যাতে বিক্রি না হয় সে বিষয়ে মেডিকেল টিম বাজারে কাজ করছে।