বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

অতিবর্ষণ ও পূর্ণিমার জোঁর প্রভাবে আমতলী ও তালতলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত | পানির নীচে আমনের বীজতলা

অতিবর্ষণ ও পূর্ণিমার জোঁর প্রভাবে আমতলী ও তালতলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত | পানির নীচে আমনের বীজতলা

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
অতিবর্ষণ ও পূর্ণিমার জোঁর প্রভাবে আমতলী ও তালতলীর চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমতলী পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। পানির নীচে তলিয়ে গেছে আউশের ধান ও আমনের বীজতলা। এতে দুর্ভোগে পরেছে দুই উপজেলার অন্তত তিন লক্ষাধীক মানুষ।
জানাগেছে, অতিবর্ষণ ও পূর্ণিমার জোঁর প্রভাবে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকুলীয় আমতলী ও তালতলীর চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরের বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ী তলিয়ে গেছে। তারা অতিকষ্টে জীবনযাপন করছে। অতি বর্ষণে আমতলী ও তালতলীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। পানিতে মাঠ-ঘাট থই থই করছে। তলিয়ে গেছে আউশের ধান ক্ষেত ও আমনের বীজতলা। চাষাবাদ প্রায় বন্ধ। জলকপাটগুলো দিয়ে তেমন পানি নিস্কাশন না হওয়ায় উপজেলায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দ্রুত পানি নিস্কাশন না হলে আউশ ধান ও আমনের বীজতলা পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা। এদিকে জোয়ারের পানিতে বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম ঘটখালী, গুলিশাখালী ও হরিদ্রবাড়িয়া এলাকার পায়রা সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ না থাকায় গাজীপুর বন্দর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ী কালাম হাওলাদার। আমতলী পৌর শহরের আমতলী সরকারী কলেজ,এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এমইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। অপর দিকে আমতলী পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। মানুষ হাটু পরিমান পানি ডিঙ্গিয়ে সড়কে উঠছে। দ্রুত পায়রা ফেরির গ্যাংওয়ে সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৬ হাজার ৩০০ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া, আঠারোগাচিয়া, হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের সকল আউশ ধানের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। জলকপাটগুলো দিয়ে পানি নিস্কাশন না হওয়ায় ভয়াবহ জলাবন্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া তালতলীর নিশানবাড়িয়া, ফকিরহাট, সোনাকাটা, নিদ্রাসকিনা, তেতুঁলবাড়িয়া, আশার চর, নলবুনিয়া, তালুকদারপাড়া, চরপাড়া, গাবতলী, মৌপাড়া, ছোটবগী, জয়ালভাঙ্গা,পচাঁকোড়ালিয়া ও আমতলীর ঘোপখালী, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম আমতলী, ফেরীঘাট, পুরাতন লঞ্চঘাট, আমুয়ার চর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, আঙ্গুরকাটা, গুলিশাখালী ও হরিদ্রবাড়িয়া নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ সকল এলাকার মানুষের ঘর বাড়ী জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
সোমবার দুপুরে আমতলী পায়রা ফেরিঘাট এলাকা সরেজমিনে দেখাগেছে, পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ হাটু পরিমান পানি ডিঙ্গিয়ে সড়কে উঠছে। যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।
লেমুয়া গ্রামের ইসহাক হাওলাদার বলেন, অতি বৃষ্টি ও পূর্ণিমার জোঁতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পায়রা নদী সংলগ্ন চর ও নির্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চরে বসবাসরত মানুষরা উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
গাবতলী আবাসনের জহিরুল ইসলাম বলেন, পানতে ঘর তলাইয়্যা গ্যাছে। গুড়াগারা লইয়্যা কষ্ট হরি।

আমতলীর পৌর শহরের আমুয়ার চর গ্রামের ফাতেমা বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে ঘর তুলিয়ে গেছে।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা বলেন, অতি বর্ষণে জলাবদ্ধতায় আউশের ধান ও আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, জলাবদ্ধতার কারনে জমি চাষাবাদ করতে পারছি না।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের কৃষক আফজাল শরীফ বলেন, পানিতে আউশ ক্ষেত এবং আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে।
গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানী গ্রামের জামাল সরদার বলেন, খেকুয়ানী জলকপাট দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নিস্কাশন না হওয়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দ্রুত পানি নিস্কাশন না হলে কৃষকের আমনের জমি চাষাবাদ এবং বীজতলা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের কৃষক শিবলী শরীফ বলেন, শুধু পানি আর পানি। চারিদিকে পানিতে থই থই করছে। বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
পায়রা ফেরিঘাটের পরিচালক মোঃ ছালাম খাঁন বলেন, জোয়ারের পানিতে ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে গ্যাংওয়ে দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত ফেরির গ্যাংওয়ে সংস্কার করা জরুরী।
আমতলী এমইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ আলম কবির বলেন, পানিতে বিদ্যালয় মাঠও কোয়াটার তলিয়ে গেছে। হাটু সমান পানি ডিঙ্গিয়ে চলাচল করতে হয়।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, পানি নিস্কাশন না হওয়ায় জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকের আউশ ধান ও আমনের বীজতলা পানির নীচে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আরো বৃদ্ধি পেলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার আলম বলেন, পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে চর ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে পানি ভিতরে পানি প্রবেশ করেনি। তিনি আরো বলেন, ঝুকিপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ আগেই সংস্কার করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech