আমতলী প্রতিনিধি:
পঞ্চম বিয়েতে সম্মতি না দেয়ায় চতুর্থ স্ত্রী সালমা বেগমকে (৩৫) কুপিয়ে হাতের আঙ্গুল কেটে দিয়েছে বিয়ে পাগল স্বামী মোকলেচ মাতুব্বর। আহত সালমা বেগমকে স্বজনরা উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্র্তি করা হয়েছে। বিয়ে পাগল মোকলেচকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বুধবার পুলিশ তাকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে উপজেলার পাতাকাটা গ্রামে মঙ্গলবার রাতে।
জানাগেছে, উপজেলার পাতাকাটা গ্রামের হাতেম আলী মাতুব্বরের ছেলে মোকলেচ মাতুব্বর এ পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছেন। চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে পটুয়াখালী জেলার বোতলবুনিয়া গ্রামের মোনাসেফ সিকদারের মেয়ে সালমাকে ৮ শতাংশ জমি লিখে দিয়ে এ বছর জানুয়ারী মাসে বিয়ে করেন মোকলেচ। কিন্তু চতুর্থ স্ত্রীতে তিনি সন্তুষ্ট না। তিনি আবার পঞ্চম বিয়ে করার উদ্যোগ নেন। পঞ্চম বিয়ে করতে তিনি চতুর্থ স্ত্রীর কাছে সম্মতি ও জমির বিক্রি করে টাকা দাবী করেন। চতুর্থ স্ত্রী সালমা সম্মতি ও টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে মোকলেচ নিজের ঘরের সিদ কেটে শ^শুর বাড়ীর দেয়া সমুদয় মালামাল চুরি করে নিয়ে যান। ওই সময় স্ত্রী সালমা বেগম বাড়ীতে ছিল না। মঙ্গলবার বিকেলে সালমা বাড়ীতে এসে ঘরে মালামাল না পেয়ে স্বামী মোকলেচকে জিজ্ঞেস করেন। বিয়ের সম্মতি, টাকা ও মালামাল নিয়ে কয়েক দফায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। ওইদিন রাত ১০ টার দিকে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী কেটে বিছিন্্ন করে দেয়। স্বজনরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মোঃ শাহাদাত হোসেন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেছেন। এদিকে বিয়ে পাগল মোকলেচের এমন কর্মকান্ডে পরিবারের লোকজন অতিষ্ঠ। তারা ওইদিন রাতে মোকলেচকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। এ ঘটনায় বুধবার সালমার বাবা মোনসেফ সিকদার বাদী হয়ে মোকলেচকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। ওই দিন পুলিশ তাকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠনো হয়েছে।
স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, মোর স্বামী আবার বিয়া হরার লই¹্যা মোর কাছে সম্মতি ও জাগা বেইচ্চা টাহা চায়। মুই এইয়্যা দেতে রাজি না অওয়ায় চুরি হইর্যা ঘরের মালামাল লইয়্যা গ্যাছে। মুই এ্যাইয়্যার প্রতিবাদ করায় মোরে কোপাইয়্যা আতের আঙ্গুল কাইট্টা দেছে । মুই এইয়্যার বিচার চাই।
সালমার বাবা মোনাসেফ সিকদার বলেন, বিয়ের পর থেকেই মেয়েকে জামাতা মোনাসেফ নির্যাতন করে আসছে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে নিরবে সহ্য করেছি। এখন আর পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে মামলা করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, মোকলেচ এ পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছে। পুরনায় আবার বিয়ে করতে উদ্যোগ নেয়। এ বিয়েতে স্ত্রী সালমা সম্মতি না দেয়ার কুপিয়ে আহত করেছে। তারা আরো বলেন, বিয়ে পাগল মোকলেচের এমন কার্মকান্ডে পরিবারের লোকজন অতিষ্ঠ। তারা সমাজে মুখ দেখাতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে গতকাল রাতে তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল মুনয়েম সাদ বলেন, সালমা বেগমের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গলী কেটে ফেলেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, স্ত্রীকে মারধরের ঘটনায় মোকলেচের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়।