কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম(২২) হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠছে তার নিজ গ্রাম তেগাছিয়া। এ হত্যায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে হাজারো নারী-পুরুষ বুধবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নিহত রাকিবুলের স্বজন ও এলাকাবাসী। নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার মূল হোতা মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সভাপতি তরিকুল ইসলামসহ মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানায় প্রশাসনের কাছে। একই সাথে দলীয় কোন্দলে আর যাতে কোন মায়ের কোল খালি না হয় এজন্য দলের হাইব্রিড নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি ওঠে। তবে প্রশাসন বলছে, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
রাকিবুল হত্যার ঘটনার মূল হোতারা ঘটনার ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও গ্রেফতার না হওয়ায় সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসী ও দলীয় কর্মীরা। বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত নারী-পুরুষ তেগাছিয়া বাজারে জড়ো হয় প্রতিবাদ জানাতে। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে তেগাছিয়া বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। এক পর্যায়ে হাজারো মানুষের ভীড় রুপ নেয় বিক্ষোভে। বিভিন্ন ব্যানার ফেষ্টুন নিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে তেগাছিয়া বাজারে শান্তিপূর্ন বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি কাজী হেমায়েত উদ্দিন হিরন এর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম বশির,সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন বয়াতী, সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন বয়াতী, ত্রান বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কিশোর, যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জিয়া খান, সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি বেল্লাল প্যাদা, সোহাগ মুন্সী, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাহাত খান,যুগ্ম সম্পাদক জুবায়েল ইসলাম ও নিহত রাকিবুল ইসলামের পিতা নাসির উদ্দিন মাতুব্বর প্রমুখ।
গত ২৮ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার সময় রাকিবুল ইসলাম কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের তেগাছিয়া বাজার থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে আজিমুদ্দিন গ্রামের স্লুইস এলাকায় মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও তার ভাই সাইফুল ইসলাম রায়হানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। সন্ত্রাসীরা রাকিবুলকে কুপিয়ে আহত করে ডান হাতটি টেনে নিয়ে একটি কাঠের ওপর রেখে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তা ছাড়া ডান হাতের কনুই পিটিয়ে গুড়ো করে দেয়।
এ ঘটনার পর স্থানীয়রা রাকিবুলকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই রাতেই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেয়া হয়। গত ৭ আগষ্ট বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
এ ঘটনার পর রাকিবুলের মা রাহিমা বেগম বাদি হয়ে গত ২৯ জুলাই রাতে কলাপাড়া থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৭-৮জন অজ্ঞাতনামা আসামী রয়েছে। মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. তরিকুল ইসলামকে মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে গত ২৯ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তরিকুল ইসলামকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করেছে।
নিহত রাকিবুলের বোন মোসাঃ নাসরিন জানায়,প্রায়ই রাকিবুল বলতো তার উপর হামলা হতে পারে। কিন্তু তরিকুল, রায়হানরা তাকে বাঁচতে দিলো না। নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী হেমায়েত উদ্দিন হিরন বলেন, এলাকার জমি দখলসহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় রাকিবুলকে হত্যা করা হতে পারে। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও সন্ত্রাসীদের দলীয় প্রশ্রয় যাতে না পায় তার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাকিবুল হত্যার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী রুবেলসহ ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হামলায় ব্যবহৃত কিছু দেশীয় অস্ত্র। এ হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।