আমতলী প্রতিনিধি:
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পড়েছে আমতলী উপজেলার নয় হাজার ৬’শ ৫৯ শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ মেয়ে বাল্য বিয়ের শিকার এবং ছেলেরা অভাব অনাটনে সংসারের হাল ধরেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুর হচ্ছে না ক্লাস মুখী। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় মুখী হওয়ার সম্ভবনা নেই বলে জানান শিক্ষকরা। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে শিক্ষকরা।
জানাগেছে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রামণ রোধে সরকার গত বছর ১৬ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করেন। গত দের বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দিয়েছেন সরকার। কিন্তু গত দের বছরে শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পড়েছে আমতলী উপজেলার ৯ হাজার ৬’শ ৫৯ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের অধিকাংশ মেয়ে বাল্য বিয়ের শিকার এবং ছেলেরা অভাব অনাটনে সংসারের হাল ধরেছে। প্রাথমিক স্তুরের শিক্ষার্থীরা ক্লাস মুখী হচ্ছে না। আমতলী উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ২’শ ৬৫ জন শিক্ষার্থী এবং মাদ্রাসায় ১৪ হাজার ৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গত সপ্তাহে গড়ে ৮০% শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত এবং ২০% শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। ওই হিসেবে মাধ্যমিক স্কুলের ৩ হাজার ৫৩ এবং মাদ্রাসায় দুই হাজার ৮’শ ১২ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। উপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা ৫৩ ভাগ মেয়ে এবং ৪৭ ভাগ ছেলে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে খুঁজে পাচ্ছে না। অধিকাংশ মেয়ে শিক্ষার্থীরা বাল্য বিয়ের শিকার হয়ে শ্বশুর বাড়ীতে অবস্থান করছে। ছেলে শিক্ষার্থীরা পরিবারের অভাব অনাটনে সংসারের হাল ধরেছে। তারা অধিকাংশই শিশু শ্রমে ঝুঁকে পরেছে। তারা সংসার হাল ধরতে ইটভাটা, অটোগাড়ী ও মোটর সাইকেল চালনাসহ ভাড়ী কাজে যুক্ত হয়েছে। অপর দিকে প্রাথমকি বিদ্যালয়ে ২৮ হাজার ৩’শ ৩৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গত এক সপ্তাহে গড়ে ৮৬.৬১% শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩.৩৯ % শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। ওই হিসেবে ৩ হাজার ৭’শ ৯৪ শিশু বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে। প্রাথমিক স্তুরের শিক্ষার্থীরা শিশু শ্রমসহ নানা কাজে জড়িয়ে পরেছেন। তারা আর বিদ্যালয় মুখী হবে না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক।
শনিবার আমতলী এমইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খোজ নিয়ে জানাগেছে, দশম শ্রেনীতে ৮৭ জন শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩৬ জন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছে।
চাওড়া চন্দ্রা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ষষ্ট শ্রেনীতে ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হয়েছে মাত্র ১২ জন। এর মধ্যে ৮ জন ছাত্র এবং ৪ জন ছাত্রী।
ঘোপখালী আল আমিন দাখিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেনীতে ৬৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪১ জন এবং দশম শ্রেনীর ৫৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৭ জন উপস্থিত হয়েছে। উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেনীতে ৩৬ জনে ১১ এবং দশম শ্রেনীতে ৩০ জনে ১২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে।
আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ আলম কবির বলেন, দশম শ্রেনীতে ৮৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু ৩৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত সপ্তাহে উপস্থিতি ভালো ছিল। তিনি আরো বলেন, সকল শিক্ষার্থী এখনো বিদ্যালয় মুখী হয়নি।
আমতলী চাওড়া চন্দ্রা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সুলতান বিশ্বাস বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম। ষষ্ট শ্রেনীতে ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অভাব অনাটনের কারনে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, অনেক মেয়েরা করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। ফলে তারা বিদ্যালয়ে আসছে না।
ঘোপখালী আল আমিন দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ইসমাইল হোসেন বলেন, করোনার কারনে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পরেছে। মেয়েরা বাল্য বিয়ের শিকার হয়ে স্বামীর সংসারের হাল ধরেছে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসার ক্লাসে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে ৮৬.৬১ % শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে শিক্ষকরা খোঁজ খবর নিয়ে বিদ্যালয় মুখী করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়া উদ্দিন মিলন বলেন, গত সপ্তাহে বিদ্যালয় ৮০% শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ছেলেরা সংসারের হাল ধরেছে এবং অধিকাংশ মেয়েরা বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা চলচে। উপজেলার স্কুল ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের খোজ খবর নিয়ে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনতে।