আমতলী প্রতিনিধি:
মোর মা সোমের্ত ভানু, বাবা আয়জদ্দিন শরীফ, স্ত্রী জাকিয়া বেগম ও দাদী আমেনা সিডরে মইর্যা গ্যাছে। এহোনো মুই হ্যাগো কতা ভুলতে পারি নাই। মোরা নৌকায় আলহাম। সেই নৌকা ডুববা চারজন মইর্যা গেছে। স্বজন হারানো কত কষ্ট হ্যা যে না হারাইছে হে বুঝবে না। এমন কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে দেন তালতলী উপজেলার অংকুজান পাড়া গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধ জামাল শরীফ। স্বজনদের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছেন তিনি। কিন্তু একই পরিবারে চারজন হারালোও আজ পর্যন্ত সরকারী কোন ঘর পায়নি জামাল। খ্যরের ঘরে বসবাস করছে সে। একটি ঘর পেলে তার পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোজার ঠাই হবে বলে জানান জামাল।
জানাগেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকুলীয় এলাকা। সিডরে উপকুলীয় আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ২৯৭ জনের প্রানহানী এবং ৪৭ জন নিখোজ রয়েছে । সিডরের আজ ১৪ বছর পুর্ণ হয়েছে। সুপার সাইক্লোণ সিডরের ক্ষত চিহৃ আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। তারই একজন তালতলী উপজেলার অংকুজান পাড়া গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধ জেলে জামাল শরীফ। জামাল শরীফ সাগর পাড়ে জাল ফেলে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। সিডরের দিন রাতে পরিবারের ৮ সদস্যকে নিয়ে তিনি কিনারে আসতে নৌকায় ওঠেন। মুহুর্তের মধ্যেই নৌকাটি পানিতে তলিয়ে যায়। চারজন বেছে থাকলেও মা সোমের্ত. বাবা আয়জদ্দিন শরীফ, স্ত্রী জাকিয়া বেগম ও দাদী আমেনাকে হারিয়ে ফেলেন। পরের দিন তাদের মরদেহ সাগর কিনারা থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ্ভাবেই জয়াল ভাঙ্গা গ্রামের আবু সালেহ সাইক্লোণ সেল্টারে যাওয়ার পথে সাগরের ঢেউয়ে হারিয়ে যায় আবু সালেহ ও তার তিন কন্যা। ওই পরিবারের বেঁচে আছে শুধু তার স্ত্রী হনুফা বেগম। ওই সাইক্লোণ সেল্টারে যাওয়ার পথে জয়ালভাঙ্গা গ্রামের ১১ জন মারা যায়। এছাড়া আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চরকগাছিয়া গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে আবদুর রহিম ধানসি কাটতে গিয়ে হারিয়ে যায়। আজও ফিরে আসেনি তিনি । তার পরিবার আজও রহিমের ফিরে আসায় প্রতিক্ষায় চেয়ে আছে। তারা স্বজন হারা বেদনায় কাতর। এভাবেই উপকুলীয় আমতলী-তালতলীর নিহত এবং নিখোজ পরিবারগুলো স্বজন হারানোয় বেদনায় কাতর। নিখোঁজের পরিবারগুলো এখনো তাদের ফিরে আসার প্রতিক্ষায় পথ পানে চেয়ে আছেন। এদিকে একই পরিবারের চারজনকে হারানো জামাল শরীফ ঘুপড়ী খ্যারের ঘরে বসবাস করছে। গত বছরেও তিনি একটি সরকারী ঘর পাননি। টাকার অভাবে তিনি তুলতে পারেননি আবাসস্থল। সিডরের আজ ১৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু আজও উপকূলবাসীরা ঘুড়ে দাড়াতে পারেনি। এখনো উপকুলের নদী ও সাগর পাড়ের অর্ধ-শতাধিক জেলে পরিবার ঘুপড়ি ঘরে বসবাস করছে। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোঃ দুলাল ফরাজী ও ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান অসহযোগীতার কারনে স্বজনহারা এ পরিবার গুলো আজও ঘুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন।
জামাল শরীফ জান্নাজনিত কন্ঠে বলেন মুইতো সবই হারিয়েছি। কোন মতে তিনটি সন্তান নিয়ে বেছে আছি। সাগরে মাছ শিকারে যাই, যখম মাছ পাই তখন খাওয়া হয়। না পাইলে আল্লায় যেভাবে চালায় সেই ভাবেই চলি। এতো মানুষ এতো ঘর পাইছে আমি একটি সরকারী ঘর পাইনি। একটি ঘর পেলে মাথা গোজার ঠাঁই হতো।
নিখোঁজ জাকির হোসের রহিমের মা রওশনআরা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “মোর চাওয়া পাওয়ার কিছুই নাই, মোর পোয়াডারে আল্লায় ফিরাইয়্যা দেউক।
তালতলীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাওসার হোসেন বলেন, সিডরে স্বজন হারানো পরিবার ঘর না পেলে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা করা হবে।