আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরেও নির্মাণ হয়নি বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার। মিনার নির্মাণ না করায় ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী মিনার নির্মাণ করে শহীদ দিবস পালন করছে তারা। কিছু প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী শহীদ মিনার থাকলেও ভাষা দিবস আসলেই ওই শহীদ মিনারগুলো ঘষা মাঝা করা হয়। ভাষা দিবস শেষ হয়ে গেলে থাকে অযন্তে আর অবহেলায়। দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাগেছে, আমতলী-তালতলী দু’উপজেলায় ৩৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে আমতলী উপজেলায় ১৫২ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়,২৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২১ টি দাখিল মাদ্রাসা, ১ টি আলিম মাদ্রাসা, ৪ ফাজিল মাদ্রাসা, ৫টি কলেজ এবং তালতলী উপজেলায় ৭৮ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২ টি দাখিল মাদ্রাসা ও ২ টি কলেজে রয়েছে। এর মধ্যে আমতলীতে ১১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুইটি কলেজ, ১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তালতলীতে ১০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট বিদ্যালয়ে কোন শহীদ মিনার নেই। অপর দিকে দু’উপজেলার কোন মাদ্রাসায়ই শহীদ মিনার নেই। শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদ দিবস পালন করছে। এছাড়া যেগুলো রয়েছে সেগুলো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। এগুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। প্রতি বছর শহীদ দিবসের দু’এক দিন পূর্বে আমতলী কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারসহ অন্যান্য শহীদ মিনার ঘষা মাজা করা হয়। দিবস শেষ হয়ে গেলে কেউ ওই মিনারের আর খবর রাখে না। ওই শহীদ মিনারে গড়ে ওঠে মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয়।
শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গুরুদল বঙ্গবন্ধু নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বন্দর হোসাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, তারিকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, মানিকঝুঁড়ি মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসা,পচাঁকোড়ালিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কড়াইবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।
আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিম মাহমুদ, জিএম ইকফা, জিসাদ, ও হুমায়রা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, কলেজের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিতে হয়। আমরা সরকারের কাছে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী জানাই।
তারিকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইউনুচ মিয়া বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শিক্ষার্থীরা আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, উপজেলার ১৪ টি বিদ্যালয় ছাড়া অবশিষ্ট বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিয়া উদ্দিন মিলন বলেন, উপজেলার ১১ টি বিদ্যালয় ও দুইটি কলেজে শহীদ মিনার আছে। তিনি আরো বলেন, কোন মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিানর নির্মাণ করা প্রায়োজন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, ভাষা শহীদদের পরিচয় জানতে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা আবশ্যক। যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেই সকল প্রতিষ্ঠানে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।