নিউজ ডেস্ক:
এবার উপাচার্যের (ভিসি) পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক সমিতির নেতারা। শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা নতুন আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। সেটা সম্ভব না হলে শিক্ষকরা নিজেরাই ক্লাস বর্জন করবেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ইতি ঘটলেও শিক্ষকরা ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল এবং সেখানে অভিযুক্তদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, এ দাবিতে তারা বুয়েটের একাডেমি ও প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করবেন না। একই ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের আন্দোলনও করবেন না। যদিও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে, একাডেমিক ভবনগুলোর তালা খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে সেখানে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।
গত ১৯ অক্টোবর বুয়েটে বিভিন্ন বর্ষের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আবরার হত্যার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এসব পরীক্ষা নিতে নতুন সময়সূচি ঘোষণার কথা ভাবছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ৷
আবরার ফাহাদের জানাজায় অনুপস্থিতসহ ক্যাম্পাসে না আসায় ভিসির পদত্যাগের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর দুদিন পর ভিসি আন্দোলনকারীদের মাঝে উপস্থিত হলে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় বসলে তার পদত্যাগের দাবিটি তুলে নেয়া হয়। জানা গেছে, বর্তমানে ভিসির পদত্যাগের দাবি তুলেছেন সিনিয়র শিক্ষকরা। তাদের যুক্তি, প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে দফায় দফায় বুয়েটের পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠছে। রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের অসন্তোষ ও অভিযোগও। এ কারণে শিক্ষকরা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে নতুনভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক পরবর্তী ভিসি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তার মধ্যে বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক ড. মোস্তফা আলী ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম সারিতে রয়েছেন। এ কারণে তারা বর্তমান ভিসির পদত্যাগ দাবি তুলে নতুন আন্দোলনের সূচনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ভিসির নানা ধরনের অনিয়ম ও অযোগ্যতা তুলে ধরে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করারও চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও ভিসি পদত্যাগ না করলে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন না- এমন ঘোষণাও দেয়া হতে পারে। বুয়েট ক্যাম্পাসে সমিতির নেতাদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভিসির পদত্যাগে সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরা অটল। এজন্য প্রয়োজনে নতুনভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা হতে পারে। আমরা অদক্ষ ও অযোগ্য ব্যক্তির অধীনে থাকতে চাই না। তার (ভিসির) কারণে বুয়েটের সার্বিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠছে।’
ইতোমধ্যে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে আমরা তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছি, যদিও তিনি পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেননি। এ বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
ভিসি হওয়ার জন্য কয়েকজন শিক্ষক নতুনভাবে আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছেন। এ তালিকার প্রথম সারিতে আপনার নামও শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ শিক্ষক নেতার দাবি, বুয়েটের পরিস্থিতি সুন্দর এবং এখানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষকদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই বলেও জানান তিনি।
গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এরপর আবরার হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের কারণে ১১ অক্টোবর বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য সাইফুল ইসলাম। শিক্ষার্থীরা তাদের সব দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য কয়েকটি দাবি বাস্তবায়নের শর্তে ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আন্দোলন শিথিল করেন।
পরে সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে ১৬ অক্টোবর বুয়েট মিলনায়তনে গণশপথের মধ্য দিয়ে মাঠের আন্দোলনে ইতি টানেন শিক্ষার্থীরা। তবে মামলার অভিযোগপত্র পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন তারা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চেয়ে বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।