আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
চীনের হুমকি উপক্ষা করেই তাইওয়ান সফরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) মালয়েশিয়া সফর শেষে তাইওয়ান যান তিনি।
রোববার (৩১ জুলাই) হাওয়াই দ্বীপ পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে পেলোসির চারদিনব্যাপী এশিয়া সফর শুরু হয়। তবে তার সফরসূচিতে তাইওয়ান সফরের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। যদিও তার তাইওয়ান সফরের পরিকল্পনা কয়েকসপ্তাহ ধরেই গুঞ্জন চলছিল।
সফর সূচি অনুযায়ী, সোমবার (১ আগস্ট) সিঙ্গাপুরে যান। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সফর করেন মালয়েশিয়া। এরপর সেখান থেকে তাইওয়ানের উদ্দেশে রওনা হন।
পেলোসির এ সফর পুরো এশিয়াজুড়ে উত্তেজনা উস্কে দিয়েছে। মঙ্গলবারও (২ আগস্ট) চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পেলোসি তাইওয়ান প্রবেশ করলে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
এদিকে পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে চীনকে ‘বাড়াবাড়ি’ না করার জন্য হুশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। একই সঙ্গে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তাইওয়ানের কাছেই একটি বিমানবাহী রণতরীসহ অন্তত চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ।
এদিকে বিবিসিরে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেলোসির সফরের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের সম্ভাব্য শক্তি প্রদর্শনীর মুখে পড়েছে তাইওয়ান। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বহু কর্মকর্তাকে হরহামেশাই তাইওয়ান সফর করতে দেখা যায়। তবে স্পিকার পেলোসির মতো শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা গত এক দশকে দ্বীপদেশটি সফর করেনি।
আর এ কারণেই পেলোসির সফরকে ‘বড় হুমকি’ হিসেবে দেখছে চীন। শুধু তাই নয়, এ সফরের জন্য ওয়াশিংটনকে ‘কঠোর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলেও হুশিয়ারি দিয়ে আসছে দেশটির কর্মকর্তারা। তবে পেলোসির আগমনে এখন বেইজিং কি পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার বিষয়।
পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়াও। বলেছে, পেলোসির তাইওয়ান সফর ‘সম্পূর্ণ উস্কানিমূলক’। সফর নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
এদিন পেলোসির তাইওয়ান পৌঁছার কয়েক ঘণ্টা আগে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পেলোসি ইতোমধ্যে তাইওয়ান গেছেন কিনা সে ব্যাপারে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তবে তার এ সফরের তোড়জোড় একেবারেই উস্কানিমূলক।’ পেশকভ আরও বলেন, মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকারের তাইওয়ান সফর চীনের সঙ্গে সংঘাত উস্কে দিতে পারে। এমনকি পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এ সফরে মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পেলোসি। মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তাইওয়ানের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থনের প্রতিশ্রুতির সম্মানার্থেই এই সফর।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তাইওয়ানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় এই অংশীদারের প্রতি আমাদের সমর্থন আরও মজবুত করাসহ আমাদের অভিন্ন স্বার্থের বিষয়টিতে অগ্রগতি সাধন এবং মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের পথে এগুনোর দিকে মনোনিবেশ করা হবে।’
পেলোসি বলেন, তার এ সফর তাইওয়ানের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের অবিচল প্রতিশ্রুতিরই বহিঃপ্রকাশ। তাইওয়ানে অবতরণের পরই এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘তাইওয়ানের ২ কোটি ৩০ লাখ জনগণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংহতি জানানো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
চীনের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে
তাইওয়ানের বিশ্লেষকরা বলছেন, পেলোসির এ সফরের জবাবে চীনের প্রতিক্রিয়া স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উভয়ই হতে পারে। তাইওয়ানের একাডেমিয়া সিনিকার যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ান বিষয়ক গবেষক জেমস লি বলছেন, বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এখন সামরিক তৎপরতা বাড়ানো হতে পারে। যেমন মহড়ার মতো করে গোলাগুলি চালানো হতে পারে। তবে সেটা এমনভাবে যাতে তাইওয়ান বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না জড়াতে হয়।
লি আরও বলেন, ‘চীনা যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানগুলো এখন তাইওয়ান প্রণালীকে বিভক্তকারী মধ্যরেখা পার হতে পারে। তবে তাদের তাইওয়ানের জলসীমা ও আকাশসীমা পার না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের পরিপ্রেক্ষিতে চীনা সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবস্থায় রাখা হয়েছে। তারা যেকোনো সময় ‘সুনির্দিষ্ট সামরিক অভিযান’ শুরু করবে বলেও জানানো হয়েছে।
পিপল’স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) এস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের পক্ষ থেকে পৃথক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের কাছেই যৌথ সামরিক মহড়া চালাবে তারা। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতেই এ মহড়া শুরু হবে। সেই সঙ্গে তাইওয়ানের পূর্বে সাগরে ক্ষেপণাস্ত্রও ছুড়বে বলে জানিয়েছে পিএলএ।