আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত আট বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে বলে রোববার (৬ নভেম্বর) জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বলেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, হিমবাহ গলে যাওয়া, মুষলধারে বৃষ্টি এবং তাপপ্রবাহ মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করে; এগুলো দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘যখন কপ ২৭ সম্মেলন চলছে তখন প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্ধকার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।’
মিশরে জড়ো হওয়া প্রায় ২০০টি দেশ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি এখন সেই মাত্রায় ধরে রাখার মতো অবস্থায় নেই। অর্থাৎ ১৯ শতকের শেষের দিকের স্তরের (১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) উপরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বৈশ্বিক উষ্ণতা সীমাবদ্ধ করতে হবে এবং এ জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯ শতকের শেষের দিক থেকে পৃথিবী ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উষ্ণ হয়েছে।
ডব্লিউএমও প্রধান পেটেরি তালাস বলেছেন, ‘উষ্ণায়ন যত বেশি হবে, প্রভাব তত খারাপ হবে।’
এদিকে মিশরের শারম-আল-শেখে রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে ২৭তম জলবায়ু সম্মেলন বা কনফারেন্স অব পার্টিজ-২৭ বা কপ-২৭। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এই সম্মেলন তাৎপর্যপূর্ণ।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আসা, ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের মতো ইস্যুতে গত বছর কপ-২৬ সম্মেলন ঘিরে ছিল অনেক প্রত্যাশা। তবে, দিন শেষে প্রত্যাশার চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লা ছিল ভারী। এরই জেরে পরিবেশবাদী আন্দোলনকারী গ্রেটা থানবার্গ জলবায়ু সম্মেলনকে ফাঁপা প্রতিশ্রুতি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
চলতি বছর বিশ্বব্যাপী বৈশ্বিক উষ্ণতা আরও বেড়েছে। ইউরোপের দেশগুলো এ বছরের শুরু থেকেই ভয়াবহ দাবানল, দাবদাহের কবলে পড়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনও উল্লেখযোগ্য হারে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে এবারের সম্মেলন কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন সমাজকর্মী ও পরিবেশবিদরা।
তীব্র দাবদাহের কবলে পড়েছে ইউরোপ। উন্নত দেশ হওয়ায় সামাজিক ও আর্থিকভাবে হয়তো খুব বেশি ক্ষতি হয়নি তাদের। তবে আফ্রিকা, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের মতো দেশে বন্যা বা দাবদাহ দেখা দিলে সেখানকার মানুষের জন্য তা ভয়ংকর দুর্দশার।