ভিনি, ভিডি, ভিসি। লাতিন এই প্রবাদের অর্থ দাঁড়ায়—আসলাম, দেখলাম এবং জয় করলাম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরে ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডের চিত্র অনেকটা এমনই। নিজেদের প্রথম ম্যাচের জয়ের তরী নোঙর করল চ্যাম্পিয়ন হয়েই। তাঁদের নৌকায় সোনার ফসল হিসেবে উঠল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের ট্রফি।
আজ রোববার বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এর আগে ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এবার পাকিস্তানকে উড়িয়ে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলল জস বাটলারের দল। এতদিন ধরে এই ফরম্যাটে শুধুমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাবিনেটে শোভা বাড়িয়েছে দুটো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবার তাদের সঙ্গী হয়েছে ইংল্যান্ড।
এদিন আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৩৭ রান তোলে পাকিস্তান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেছেন শান মাসুদ। ২৮ বলে দুই বাউন্ডারি আর এক ছক্কার মার ছিল তাঁর ইনিংসে। জবাব দিতে নেমে ৬ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। দলের জয়ের ম্যাচে ৪৯ বলে ৫২ রানের কার্যকরী ইনিংস উপহার দের স্টোকস। তাঁর সঙ্গে মঈন আলি করেন ১৩ বলে ১৯ রান।
এদিন মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ড। আগে বোলিং করার সুবিধা ভালোভাবেই কাজে লাগায় ইংলিশরা। ইনিংসের শুরুটা হয় বেন স্টোকসকে দিয়ে। প্রথম ডেলিভারি তিনি দেন ‘নো বল’। সেই মোমেন্টাম অবশ্য ধরতে পারেনি পাকিস্তান।
এরপর পাওয়ার প্লেতে পুরো সময়ই দাপট দেখায় ইংল্যান্ড। এর মধ্যে পঞ্চম ওভারে রিজওয়ানকে হারায় পাকিস্তান। স্যাম কারানের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে বলে ব্যাট চালিয়ে দেন রিজওয়ান। কিন্তু টাইমিং ঠিক ছিল না তাঁর। ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। এক ছক্কায় ১৪ বলে ১৫ রান করে বিদায় নেন পাকিস্তান ওপেনার। ১ উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৩৯ রান তোলে পাকিস্তান।
পাওয়ার প্লের পর আরেকটি ধাক্কা খায় পাকিস্তান। অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসেই মোহাম্মদ হারিসকে নিজের শিকার বানান আদিল রশিদ। ইংলিশ তারকার ঝুলিয়ে দেওয়া বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারেন হারিস। কিন্তু ঠিকঠাক মারতে পারেননি। বল চলে যায় লং অনে। সেখানে থাকা বেন স্টোকস সেটা লুফে নেন। ১২ বলে ৮ করে ফেরেন হারিস।
মাঝে বাবর আজমের সঙ্গে আশা জাগান শান মাসুদ। কিন্তু এই জুটিও ভেঙে দিলেন রশিদ। ১২তম ওভারে পাকিস্তান অধিনায়ককে ফাঁদে ফেলেন তিনি। উইকেটে রান নিতে ভুগতে থাকা বাবর চেষ্টা করছিলেন ইনিংস মেরামতের। উইকেটে থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন। আদিল রশিদ তাঁকে ইনিংস বড় করতে দিলেন না। ১২তম ওভারে মেডেন উইকেট নিয়ে পাকিস্তান তারকাকে বিদায় করেন তিনি। ২৮ বলে ৩২ রান করে সাজঘরের পথে হাঁটেন বাবর।
উইকেটে আসা ইফতেখার প্রথম ৫ বলেই রান নিতে ব্যর্থ হন। ষষ্ঠ বলে তিনিও উইকেট উপহার দেন। শূন্যতে তাকে বিদায় করে উৎসবে মাতেন স্টোকস।
একের পর এক উইকেট হারিয়ে মেলবোর্নে শুধু হতাশাই দেখছিল পাকিস্তান। এই হতাশার মাঝে আশার আলো হয়ে লড়াই করেন শান মাসুদ। জুটি গড়ার চেষ্টা করে দলকে পথ দেখান তিনি। কিন্তু আশাও মিলিয়ে দেন কারান। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে এসেই থামান শানকে। তরুণ পেসারের বলে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন শান। সেখান থেকা লিয়াম ভুল করেননি ক্যাচ ধরতে। এরপর বাকি সময় আর রানে ফেরার পথ পায় পাকিস্তান। ফরে শেষ পর্যন্ত অল্প পুঁজি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাবরকে।
বল হাতে ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র ১২ রান খরচায় তিনটি উইকেট নেন স্যাম কারান। ২২ রান খরচায় দুটি উইকেট নেন আদিল রশিদ। সমান দুটি নেন ক্রিস জর্ডান। একটি নেন বেন স্টোকস।
রান তাড়ায় ইংল্যান্ডের শুরুটাও ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উড়তে থাকা অ্যালেক্স হেলসে হারায় ইংল্যান্ড। এরপর মেরে খেলতে গিয়ে উইকেট উপহার দেন ফিল সল্ট। থিতু হয়ে টিকতে পারেননি জস বাটলারও। ২৬ রানে তাকে মাঠ ছাড়া করেন হারিস রউফ।
মাঝে প্রতিরোধ গড়েন বেন স্টোকস ও হ্যারি ব্রকস। ৩৯ রানে এই জুটি ভাঙেন শাদাব খান। দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে ব্রুককে সাজঘরের পথ দেখান শাহিন আফ্রিদি। এই জুটি ভাঙার পর আশা জাগে পাকিস্তান শিবিরে। তবে শাহিন শাহ আফ্রিদি ক্যাচ নিতে গিয়ে চোটে পড়লে সেই আশাও শেষ হয়ে যায়। স্টোকস আর মঈন আলি মিলে সহজেই ইংল্যান্ডকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ২০ ওভারে ১৩৭/৮ (রিজওয়ান ১৫, বাবর ৩২, হারিস ৮, ইফতেখার ০, শান ৩৮, শাদাব ২০, নওয়াজ ৫, ওয়াসিম ৪, আফ্রিদি ৫, রউফ ১ ; কারান ৪-০-১২-৩, রশিদ ৪-১-২২-২, স্টোকস ৪-০-৩২-১, লিয়াম ১-০-১৬-০, জর্ডান ৪-০-২৭-২ , ওকস ৩-০-২৬-০)।
ইংল্যান্ড : ১৯ ওভারে ১৩৮/৫ (হেলস ১, বাটলার ২৬, সল্ট ১০, ব্রুক ২০, স্টোকস ৫২, মঈন ১৯, লিয়াম ১; আফ্রিদি ২.১-০-১৩-১, নাসিম ৪-০-৩০-০, রউফ ৪-০-২৩-২, ইফতেখার ০.৫-০-১৩-০, শাদাব ৪-০-২০-১, ওয়াসিম ৪-০-৩৮-১)।
ফল : ৫ উইকেটে জয়ী ইংল্যান্ড।
বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন : ইংল্যান্ড।