‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বর্তমানের একবিংশ শতাব্দী। সব যুগে, সকল কালে বঞ্চনার, নিগ্রহের কিংবা নিষ্পেষণের শিকার হয়েছেন নারী। কাজী নজরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে/ কত নারী দিল সিঁথির সিদুর, লেখা নাই তার পাশে।’
আধুনিক যুগে নারীদের জয়জয়কার, সাফল্যের শাণিত তলোয়ার পুরুষদের চেয়ে কম তীক্ষ্ণ নয়। তবুও যুদ্ধ যেন নারীদের নিত্য সঙ্গী। প্রতিনিয়ত সে যুদ্ধে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে সুপারসনিক গতিতে। আর তারই আরেকটি অকাট্য প্রমাণ হবে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২। এই প্রথম পুরুষদের বিশ্বকাপে রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৬ জন নারী। কাজী নজরুল বেঁচে থাকলে হয়তো এই নারীকে নিয়ে নতুন করে লিখতে হতো, ভাবতে হতো। তাঁর আক্ষেপের ‘সিঁথির সিদুর’ দিয়ে লিখতে পারতেন অনন্য সম্মোহনী সত্যকে।
কাতার বিশ্বকাপের জন্য রেফারি, সহকারী রেফারি ও ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারিদের (ভিএআর) যে তালিকা প্রকাশ করেছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা, সেখানে ৬ জন নারী যেন সেই সম্মোহনী সত্যেরই প্রতীক। মোট ৬৪টি ম্যাচে প্রধান রেফারি থাকবেন ৩৬ জন, সহকারী রেফারি ৬৯ জন আর ভিএআরের জন্য থাকবেন ২৪ জন। ১২৯ জনের ভিড়ে ‘ছয়’ সংখ্যাটি খুবই ছোট, তবে শাণিত।
ছয় নারীর মধ্যে প্রধান রেফারি হিসেবে থাকবেন—জাপানের ইয়োশিমি ইয়ামাশিতা, ফ্রান্সের স্টেফানি ফ্র্যাপার্তে ও রুয়ান্ডার সালিমা মুকাসানগা। আর সহকারী রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন—ব্রাজিলের নিউজা ব্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথরিন নেসবিট এবং মেক্সিকোর কারেন দিয়াজ মেদিনা।
এই ৬ নারীর প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ ও তারকা রেফারি। বিশেষ করে ফ্রান্সের ফ্র্যাপার্ত ২০১১ সাল থেকে ফিফার আন্তর্জাতিক রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ইউরো, চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা সুপার লিগসহ বিভিন্ন অঙ্গনে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।
ইতোমধ্যে ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের এই অগ্রযাত্রা চোখে পড়ার মতো। ধারাভাষ্যকার, ম্যাচ পরিচালনা, বিশ্লেষণ এমনকি খেলার মাঠেও অপ্রতিরোধ্য তাঁরা। তাই কবির কণ্ঠের বাণী বিফলে যায়নি, ‘সেদিন সুদূর নয়- / যে দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়।’ বিশ্বকাপ ফুটবলে যে যাত্রা এই ৬ মহীয়সী শুরু করলেন, তার ধারাবাহিকতা থাকবে সুদূরপ্রসারী এবং এই জয়গান অমলিন হয়ে থাকবে।