নিজের হাজারতম ম্যাচে জ্বলে উঠলেন লিওনেল মেসি। আগের ম্যাচে পেনাল্টি মিস করা মেসি এবার হলেন দলের ত্রাতা। গোল করে দলকে পথ দেখালেন আর্জেন্টাইন তারকা। সঙ্গে জালের দেখা পেয়েছেন জুলিয়ান আলভারেজ। দুই তারকার গোলে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা।
কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে শনিবার দিবাগত রাতে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার আগে শেষ আটে উঠেছে নেদারল্যান্ডস। এবার দ্বিতীয় দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করল লিওনেল স্কালোনির দল।
এটি ছিল মেসির ক্যারিয়ারের ১ হাজারতম ম্যাচ। এমন দিন রাঙাতে চান যে কোনো ফুটবলারই। লিওনেল মেসিও করলেন সেই চেষ্টা। কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রাখেন মেসি। বাকি গোল বিরতির পর করেন আলভারেজ।
টিকে থাকার ম্যাচের প্রথমার্ধে আক্রমণে তেমন ধার দেখাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে রক্ষণ আগলে খেলেছে অসিরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ধার বাড়ায় আর্জেন্টিনা। তবে লিড পাওয়ার পর সেটাও বেশি চোখ রাঙাতে পারেনি অসিদের রক্ষণভাগকে।
পুরো ম্যাচে ৬১ভাগ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে আর্জেন্টিনা। এই সময়ে ১৪টি শট নিতে পারে আর্জেন্টিনা। যার মধ্যে ৫টি ছিল অনটার্গেট শট। অন্যদিকে অসিরাও আক্রমণে গেছে মাত্র ৫ বার। পুরো সময় রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিল অস্ট্রেলিয়া। তাছাড়া অধিকাংশ সময়ই খেলা হলো মাঝমাঠ কেন্দ্রিক।
কাতারের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে ম্যাচের ২০তম মিনিট পর্যন্ত প্রতিপক্ষ শিবিরে একটি শটও নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। আগের ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেওয়া আর্জেন্টিনা যেন ছন্দ খুঁজে বেড়াচ্ছিল।
ম্যাচের ৩১তম মিনিটে আকুনা প্রতিক্ষের খেলোয়াড়কে ফাউল করলে কর্নার পায় অস্ট্রেলিয়া। তবে পারেনি সে সুযোগ কাজে লাগাতে। এর দুই মিনিট বাদে বিপদজনক জায়গায় ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। ফ্রিক কিক থেকে বল জালে জড়াতে পারেননি মেসি। তবে গোল ঠিকই করেছেন।
ফ্রি কিকের পর প্রতিপক্ষের ডি বক্সের জটলা থেকে বাঁ পাশ থেকে দুর্দান্ত এক গোলে আর্জেন্টিনাকে লিড এনে দেন মেসি। সবমিলিয়ে এটি বিশ্বকাপে তাঁর ৯ নবম গোল, নক আউট পর্বে প্রথম। এ ছাড়া বিশ্বকাপে গোলের হিসেবে কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে গেলেন মেসি।
মেসির গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতি থেকে ফিরেই ৫৭ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়বার আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেন আলভারেজ। ডি বক্সের মধ্যে দুই আর্জেন্টাইন ফুটবলারের সামনে পরে যান ম্যা ট রায়ান। একজনকে কাটাতে পারলেও আলভারেজকে এড়াতে পারেননি রায়ান। তার পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন আলভারেজ।
কিন্তু এই আনন্দ শেষ দিকে এসে হারাম করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের ৭৭তম মিনিটে আর্জেন্টিনাকে স্তব্ধ করে ম্যাচে ফেরার আভাস দেয় অস্ট্রেলিয়া। আর্জেন্টিনার বক্সে দূরপাল্লার শটে গুডউইন গোল করে ব্যবধান কমান। তার নেওয়া শট এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিফ্লেক্ট করে আর্জেন্টিনার জালে জড়ায়। গোল পাওয়ার পর আক্রমণে ধার বাড়ায় অসিরা। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ঘটেনি। জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।
সৌদি আরবের কাছে হার রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল আর্জেন্টিনার মনে। যাদের ভাবা হয় এই বিশ্বকাপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন, তারাই কি না শুরু করে হার দিয়ে। দলটি আর্জেন্টিনা বলে ভক্তদের চাওয়ার শেষ নেই। প্রতিদান দিতে ভুল করেনি আকাশী-নীলরা।
গ্রুপ পর্বের শেষ দুই ম্যাচে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেন লিওনেল মেসিরা। এবার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে জায়গা করে নিল শেষ আটের লড়াইয়ে।