আচমকা থমকে গেল হ্যারি কেইনের স্বপ্নযাত্রা। খেলা হতে পারত আরও কিছুক্ষণ। কিন্তু নিতান্তই মন্দ কপাল ইংল্যান্ডের। দ্বিতীয় পেনাল্টির শট চলে গেল গোল ছেড়ে অনেক দূরে, সঙ্গে নিয়ে গেল কেইনদেরও। আর প্রতাপ দেখিয়ে ২-১ গোলের জয় নিয়ে ইংলিশদের হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করলো ফ্রান্স।
শনিবার দিবাগত রাত ১টায় কাতারের আল বায়াত স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স-ইংল্যান্ড। ম্যাচের শুরু থেকেই তীব্র লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিল দুদল। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ড সমতায় ফিরলেও শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জয় তুলে নেয় ফ্রান্স। তাতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয় ফরাসিদের।
বিরতি থেকে ফিরেই ইংল্যান্ড চেষ্টা করছিল সমতায় ফিরতে। জুড বেলিংহামের নেওয়া শটটি ফরাসি গোল প্রহরী হুগো লরিস কোনোমতে ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দলকে গোল হজমের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। কর্নার থেকে হ্যারি ম্যাগুয়ারের হেড থেকে বল আবারও গোলমুখে ধাবিত হয়েছিল। তখনও ত্রাতার ভূমিকা রেখেছিলেন লরিস।
৫২ মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যেই ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার বুকায়ো সাকাকে ফাউল করে বসেন গোল করা ফরাসি মিডফিল্ডার অরেলিয়ান চৌমেনি। তাতে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি। গোলের সুযোগ মিস করেননি দলপতি হ্যারি কেইন। খেলা ফিরেছিল ১-১ গোল সমতায়। সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবধান বাড়াতে পারত ফ্রান্স। ৫৪ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে দারুণ পাস পেয়ে গোলের সুযোগ থেকে দলকে বঞ্চিত করেছিলেন অ্যাড্রিয়েন রাবিওট। তাঁর সামনে ছিলেন শুধু ইংল্যান্ড গোলরক্ষক। কিন্তু রাবিওটের বাঁ পায়ের দুর্বল শট জালের সন্ধান পায়নি।
অপর প্রান্ত থেকে আবার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন এমবাপ্পে। তখনও ব্যর্থ হয়েছিলেন সতীর্থরা। মধ্যমাঠ থেকে নিজেই বল নিয়ে ইংল্যান্ডের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন তারকা এমবাপ্পে। দেখিয়েছিলেন গতির খেলা এবং ভেলকি। ইংলিশ রক্ষণভাগ পরাস্ত করে দিয়েছিলেন ক্রস। কিন্তু তিন ফরাসি স্ট্রাইকার গিরুদ, ডেম্বেলে কিংবা গ্রিজম্যান কেউই এমবাপ্পের ক্রসে সাড়া দিতে পারেননি।
ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। ৬৯ মিনিটে হেন্ডারসনের ক্রসে মাথা দিয়েছিলেন হ্যারি ম্যাগুয়ার। দুর্ভাগ্য ইংল্যান্ডের। ম্যাগুয়ারের হেড থেকে গোলের পাশ ঘেঁষে বল চলে যায় সীমানার বাইরে। ৭১ মিনিটেও মন্দ কপালের সাক্ষী হতে হয়েছিল হ্যারি কেইনদের। লুক শয়ের ক্রসে পা দিয়েছিলেন বুকায়ো সাকা। তবে বল চলে যায় গোলের বাইরে।
৭৬ মিনিটে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। প্রথমে অলিভিয়ার গিরুদের শট গোল থেকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড। তাতে এসেছিল কর্নারের সুযোগ। কর্নার থেকে কয়েক পা ঘুরে বল গিয়েছিল গিরুদের কাছেই। হেড থেকে তিনি বাড়িয়ে নিয়েছিলেন ব্যবধান। ফলে ২-১ গোলে লিড পায় ফ্রান্স।
৮০ মিনিটে আবারও সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। এবারও দলটি পেয়েছিল পেনাল্টি। ডি-বক্সের মধ্যে মেসন মাউন্টকে ধাক্কা দিয়েছিলেন ফরাসি ডিফেন্ডার থিও হার্নান্দেজ। তবে সমতায় ফেরার দ্বিতীয় পেনাল্টি কাজে লাগাতে পারেননি হ্যারি কেইন। গোলের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায় কেইনের পেনাল্টি শট। তাতে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে হেরে কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয় ইংল্যান্ডের।
এ দিন প্রথম থেকেই দুদলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে মুখরিত হয়ে উঠেছিল কাতারের আল বায়াত স্টেডিয়াম। ১১ মিনিটে ফরাসি স্ট্রাইকার উসমান ডেম্বেলের ক্রসে হেড দিয়েছিলেন অলিভিয়ার গিরুদ। একটু ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সে যাত্রায় দলকে রক্ষা করেছিলেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। তবে ১৭ মিনিটে ফরাসি মিডফিল্ডার অরেলিয়ান চৌমেনির ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটটি আটকাতে পারেননি পিকফোর্ড। তাতে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। গোলটিতে সহায়তা করেছিলেন অ্যান্টোইন গ্রিজম্যান।
তবে ম্যাচের প্রথম গোলের মূল কারিগর ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফরাসি এই তারকা ওয়ান-বাই-ওয়ান পাসে বল নিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন। নিজেই গোলমুখে শট নেওয়া বিপজ্জনক মনে করে বল বাড়িয়েছিলেন সতীর্থ গ্রিজম্যানের কাছে। গ্রিজম্যান দিয়েছিলেন চৌমেনির পায়ে। আর ফল হিসেবে গোল পেয়েছিল ফ্রান্স।
প্রথমার্ধে গোল হজম করে পাল্টা আক্রমণে নেমেছিল ইংল্যান্ড। সমতায় ফিরতে বেশ কয়েকটি সুযোগও পেয়েছিল হ্যারি কেইনের দল। তবে সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। ২১ মিনিটে কেইনের শট থামিয়ে দিয়েছিলেন ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস। ২৯ মিনিটেও ব্যর্থ হয়েছিল ইংল্যান্ড শিবির। ফরাসি গোলের সামনে সে বার বলে পা ছোঁয়াতে পারলেই ইংল্যান্ড পেয়ে যেত কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা।
ফ্রান্স-ইংল্যান্ড ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল গোল না পাওয়া ইংল্যান্ড। ৫৭ শতাংশ বল দখলে রেখে তাঁরা গোলমুখে নিয়েছিল ১৬টি শট, যার মধ্যে ৮টি ছিল লক্ষ্যে। আর ফ্রান্স বল রেখেছিল ৪৩ শতাংশ। এমবাপ্পেরা গোলে শট নিয়েছিলেন ৮টি, এর মধ্যে ৫টিই ছিল অন টার্গেটে।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর রাত ১টায় কাতারের আল বায়াত স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় ম্যাচে মরক্কোর মুখোমুখি হবে ফ্রান্স।