স্পোর্টস ডেস্ক :
কাতার বিশ্বকাপের আর মাত্র একটি ম্যাচ বাকি। নিঃসন্দেহে সেটি দ্য গ্রেট শো অন আর্থের ফাইনাল। আর এই ম্যাচে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা নামবে কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্সের বিপক্ষে। আজ রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আইকনিক লুসাইল স্টেডিয়ামে শুরু হবে শিরোপা নির্ধারণী এ লড়াই।
ম্যাচ শেষে সোনালী ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরবেন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি কিংবা ফ্রান্সের উগো লরিস। দ্বিতীয় জনের জন্য এই স্বাদ যদিও প্রথম নয়, তবে প্রথম জনের এখনও অধরা সেই স্বপ্ন। লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের এই দুই দল ফাইনালে ওঠায় একটি ব্যাপার অবশ্য নিশ্চিত হয়ে গেছে- নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি জিতবে যে কোনো এক দল।
ব্রাজিলের পাঁচবার, জার্মানি-ইতালির চারবার, আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স-উরুগুয়ের দুইবার, ইংল্যান্ড-স্পেনের একবার। বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষেত্রে শুধু ৩ সংখ্যাটিই ফাঁকা পড়ে আছে। সেটিও এবার পূর্ণ হচ্ছে।
শুরু থেকেই ফেভারিটের তকমা নিয়ে আসা আর্জেন্টিনা হোঁচট খায় প্রথম ম্যাচে। এরপরের যাত্রাটা ছক কষে, বুঝেশুনে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের যাত্রাটা অবশ্য মসৃণ, ফাইনালে এসেছে চ্যাম্পিয়নের মতোই।
ফাইনালের লড়াইটা হবে সেয়ানে-সেয়ানে। ডাগআউটে দুই মাস্টারমাইন্ড লিওনেল স্কলোনি ও দিদিয়ের দেশম আছেন, যারা ধরতে পারেন প্রতিপক্ষের স্নায়ুকে! পড়তে পারেন আক্রমণের ভাষা, রক্ষণের নিরবতা। যদি সবুজ আয়তক্ষেত্রে ঢুকি, রক্ষণ থেকে আক্রমণ, মাঝখানে মধ্যমাঠ; সর্বত্র ভারসাম্য দুই শিবিরেই।
আর্জেন্টিনার অপেক্ষা দীর্ঘ ৩৬ বছরের। ৩৫ বছর বয়সি লিওনেল মেসির আক্ষেপ আরও বড়। এক জীবনে যা যা জেতার, তারচেয়ে ঢের বেশি জিতেছেন। তবু অতৃপ্তি, একটি বিশ্বকাপ নেই। সেই বিশ্বকাপ পেতে যতটা করতে হয়, ঢের বেশি করেছেন। ৬ ম্যাচে ৫ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট, ৪ ম্যাচসেরায় আছেন গোল্ডেন বুট ও বল, দু’টোর দৌঁড়েই।
মেসির মোক্ষম জবাব কিলিয়ান এমবাপ্পে। এমবাপ্পের বয়স সবে ২৩। বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেছেন আগেরবার। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজের আগমনী বার্তা জানানো এমবাপ্পে এবার আরও পরিণত। ৫ গোল, ২ অ্যাসিস্ট, ৩ ম্যাচসেরায় আলবিসেলেস্তেদের সবচেয়ে বড় হুমকি তিনিই।
দুর্দান্ত মধ্যমাঠ আছে উভয় দলেরই। আছে ইস্পাত-দৃঢ় রক্ষণভাগ। আক্রমণে মেসি-এমবাপ্পেকে সঙ্গ দিতে আছেন আলভারেজ, জিরুডরা। মাঝমাঠে ডি মারিয়া যেমন হুমকি, তেমনি ফরাসি শিবিরে আছে আন্তোইন গ্রিজম্যান, যিনি এই আসরে বনে গেছেন পুরোদস্তুর মিডফিল্ডার। তেকাঠির নিচে তো পরীক্ষীত হুগো লরিস আর এমিলিয়ানো মার্টিনেজ আছেনই।
তবে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা দিতে হবে রক্ষণভাগকে। অন্তত বিশ্বকাপে দুই দলের শেষ লড়াই সেটিই বলে। গত রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারায় ফ্রান্স। ৭ গোলের ধুন্ধুমার লড়াই দেখে ফুটবলপ্রেমীরা। যদিও, সেই পরিসংখ্যান এখন কেবলই সংখ্যা মাত্র। নামতে হবে শূন্য থেকে।
ফ্রান্সের সামনে ইতিহাসের হাতছানি। ইতালি ও ব্রাজিলের পর টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতা তৃতীয় দল হওয়ার। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের শ্রেষ্ঠত্বে বাগড়া দিতে তৈরি ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট আর্জেন্টিনা। উভয় দিলের বিশ্বকাপ সংখ্যা দুই। যারা জিতবে, সংখ্যা বাড়বে। তিন শিরোপা নিয়ে থাকবে চারে। ব্রাজিলের পাঁচ, ইতালি-জার্মানির চারের পর তাদের তিন!
একটি মাত্র ম্যাচ। ৯০ মিনিটের যাত্রা, বাড়লে ১২০ মিনিট, আরেকটু বাড়লে পেনাল্টি শুটআউট। মোটামুটি ঘণ্টাদুয়েক। এট জন্য কত প্রতীক্ষা, ত্যাগ, তপস্যা! বিশ্বকাপের সোনালি গোলক ছুঁয়ে দেখার গোলকধাঁধায় কে জিতবে? ফরাসিদের টানা দুই নাকি আকাশী-নীলদের তিন যুগের অবসান? উত্তর বেশি দূরে নয়! অপেক্ষা লুইসালের ফাইনালের।