বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

স্পোর্টস ডেস্ক :

‘আর সেই ঘরের মধ্যে হাসির উল্লাস

ঝনঝন শব্দ করছে স্বর্গীয় ঘণ্টার মতোন

ঝলসে উঠছে কয়েকটি সূক্ষ্ম অগ্নিস্ফুলিঙ্গ!’

ফরাসি কবি পল ভ্যার্লেনের কবিতার এই গুচ্ছ পঙক্তিমালা কি আজ রাতের জন্যই লেখা হয়েছিল? তিনি কি জানতেন, কবিতা ফিরে আসবে তার মাতৃভূমির বিরুদ্ধে। জানলেও বোধহয় রাগ করতেন না। যে শিরোপার জন্য এত অপেক্ষা আজ যেন কবিতার মতোই রোমাঞ্চকর ফুটবল উপহার দিয়ে অপেক্ষার চৌকাঠ মাড়ালো আর্জেন্টিনা। অবসান ঘটলো ৩৬ বছরের। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো আর্জেন্টিনা।

একটি শিরোপার জন্য আর্জেন্টিনার অপেক্ষা বহু বছরের। লিওনেল মেসির অপেক্ষাটা আরও বড়। এক জীবনে ফুটবল ক্যারিয়ারের যা জেতার সব জিতেও একটি সোনালি ট্রফির জন্য ক্যারিয়ারজুড়ে অপূর্ণতা ভর করেছিল তাঁর। মরুর বুকে ধুয়েমুছে গেল সব অপূর্ণতা। শেষ হলো দীর্ঘ আর্জেন্টিনার অপেক্ষা। লিওনেল মেসির যুগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো আর্জেন্টিনা।

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে দুদল ছিল ৩-৩ গোলের সমতায়। দিয়েগো ম্যারাডোনার পর লিওনেল মেসির যুগে এসে নিজেদের তৃতীয় শিরোপার দেখা পেল আর্জেন্টিনা। দলের জয়ের ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন লিওনেল মেসি নিজে। সঙ্গে জালের দেখা পেয়েছেন ডি মারিয়া।

লুইসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের  ফাইনাল মহারণে লড়াইয়ের আগে ফেভারিটের তকমা ছিল ফ্রান্সের গায়ে। সেটা হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ ৪ বছর আগেই বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল তারা। কিন্তু মূল লড়াইয়ে বিশ্ব দেখল আর্জেন্টিনার দাপট। কি বল দখল, কি আক্রমণ—আর্জেন্টিনার দাপট ছিল সর্বত্র।

পুরো ম্যাচে ৫৪ ভাগ সময় বল দখলে রেখে ২০বার আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। যার মধ্যে অনটার্গেট শট ছিল ১০টি। অন্যদিকে ম্যাচের প্রথমার্ধে একবারও আক্রমণে যেতে না পারা ফ্রান্স বাকি সময়ে ১০ বার আক্রমণে যায়। তাতেই বাজিমাত হয়ে যায়। ম্যাচ সমতায় ফিরিয়ে নাটক জমিয়ে দেয়। কিন্তু টাইব্রেকারে গড়ালে আর্জেন্টিনার সামনে পেরে ওঠেনি ফরাসিরা।

৪-৪-২ ফরমেশনে মাঠে নামা আর্জেন্টিনা ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক। আক্রমণে উঠে পঞ্চম মিনিটে নেয় প্রথম শট। তবে অ্যালিস্টারের নেওয়া শট ঠেকিয়ে দিতে ভুল করেননি হুগো লরিস। ১৭তম মিনিটে সুযোগ হাতছাড়া করেন ডি মারিয়া। প্রতিপক্ষের ডি বক্সে বল পেয়ে তিনি মারলেন ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে।

তবে গোলের অপেক্ষা দীর্ঘ হয়নি আর্জেন্টিনার। ম্যাচের বয়স তখন ২১ মিনিট। প্রতিপক্ষের ডি বক্সে বল নিয়ে ঢুকে যান ডি মারিয়া। কিন্তু ওই মুহূর্তে ডি মারিয়াকে পেছন থেকে ফাউল করে বসেন উসমান দেম্বেলে। পেনাল্টির সুযোগ পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করেননি লিওনেল মেসি। সফল স্পট কিকে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে এগিয়ে নেন অধিনায়ক। এবারের বিশ্বকাপে এটি মেসির ১২তম গোল। স্পর্শ করলেন ফুটবল কিংবদন্তি পেলেকে। গোল করায় তাঁদের চেয়ে এগিয়ে কেবল আর চারজন।

এগিয়ে যাওয়ার আমেজ শেষ না হতেই ফের গোল উৎসব। এবার পেনাল্টি নয়, নায়ক বনে যান কোপা আমেরিকা জেতানো ডি মারিয়া। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে ডি মারিয়ার পা থেকে আসে পরের গোলটি। এখানেও আছেন মেসি। মাঝমাঠে থেকে বল এগিয়ে দেন তিনি। পাস পেয়ে আলভারেজ বাড়ান ম্যাক অ্যালিস্টারকে। তাঁর পাস বক্সে বাঁ দিক থেকে চোখ ধাঁধানো শট নেন ডি মারিয়া। ফ্রান্স গোলকিপার হুগো লরিসের ফ্রান্স গোলকিপার হুগো লরিসের কিছুই করার ছিল না।

২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতি থেকে ফিরেও আক্রমণে দাপট ছিল তাদের। কিন্তু শেষ ১০ মিনিটে খেলা ঘুরিয়ে দিলেন এমবাপ্পে। ৮০তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে করলেন প্রথম গোল, পরের মিনিটেই দিলেন দ্বিতীয় গোল। তাতেই এলোমেলো হয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

দ্বিতীয়বার জালে বল পাঠিয়ে টুর্নামেন্টে সপ্তম গোল স্পর্শ করেন এমবাপ্পে। মেসিকে ছাপিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান তিনি। ফ্রান্স সমতায় ফিরলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে লড়াই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত্র ত্রাতা হলেন সেই মেসিই। লুইসাল স্টেডিয়াম দেখল তাঁর বা পায়ের জাদু। ১০৮তম মিনিটে জয় সূচক গোল করে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ উপহার দিলেন রেকর্ডবারের বর্ষসেরা ফুটবলার।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech