আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বিশ্ববাজারসহ বিভিন্ন দেশে কয়েক মাসে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে। এর কারণে মূল্যবান এই ধাতুর দাম তরতরিয়ে বাড়ছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় রবিবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববাজারে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ১৮ ডলার। ফলে গত এক মাসে বেড়েছে ১২১ দশমিক ৬৫ ডলার। এদিন দুপুরে বিশ্ববাজারে সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৯২০ ডলার। যা ২০২২ সালে সামগ্রিকভাবে সোনার দাম বেড়েছে আউন্সপ্রতি ৮০ দশমিক ৫০ ডলার। গত বছর বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ দফায় দফায় নীতি সুদহার বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে বন্ড কেনায় বিপুল বিনিয়োগ করেন।
এর ফলে সোনায় বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে। এ কারণে সামগ্রিকভাবে গত এক বছরে সোনার দাম তেমন বাড়েনি। অথচ গত ছয় মাসে সোনার দাম বেড়েছে আউন্সপ্রতি ১৮৬ দশমিক ২ ডলার। এর মধ্যে দেশে দেশে মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড গড়ছে সোনা। এরইমধ্যে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৬৮৩ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এর ফলে এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার কিনতে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা লাগবে। যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৫ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে সোনার এই নতুন দর কার্যকর হয়েছে।
যদিও জুয়েলার্স সমিতির সহ সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম মনে করেন, বিশ্ববাজারে সোনার দাম গত শুক্রবার যতটুকু বেড়েছে, তাতে দেশের বাজারে প্রতি ভরির দাম হওয়ার দরকার ৯৬ হাজার টাকা। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের বুলিয়ন বাজারে খাঁটি সোনার ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। সে কারণে এ মূল্যবান ধাতুর দাম ততটা বাড়ানো হয়নি। শুক্রবার ভারতের বাজারে পাকা সোনার (২৪ ক্যারেট) প্রতি ভরির দাম ছিল ৫৭ হাজার রুপি। একদিনের মধ্যে শনিবার সেই দর ৫৭ হাজার ৫শ রুপির কাছাকাছি পৌঁছে যায়। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সোনা আমদানিকারক দেশ ভারতে চলছে এখন বিয়ের ভরা মৌসুম।
ফলে গয়নার কারিগর থেকে সাধারণ মানুষ- সবার মনেই এখন এক প্রশ্ন, আর কত বাড়বে সোনার দাম, কত দিনে স্বস্তি দেবে সোনা। এ নিয়ে অবশ্য ব্যবসায়ীরা খুব একটা আশ্বাস দিতে পারছেন না। বরং তাদের মনে শঙ্কা, বিশ্ববাজারে সোনার দামের যে হাল, তাতে আগামী কয়েক দিনও নতুন নতুন রেকর্ড গড়তে পারে এ মূল্যবান ধাতু। ২০২১ সালে মোট ১ হাজার ৬৮ টন সোনা আমদানি করেছিল ভারত। ইকোনমিক টাইমসের খবর, গত বছর ভারতে সোনা আমদানি প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে ৭০৬ টনে নেমে আসে। ডিসেম্বরে ভারতে সোনা এসেছে ২০ টন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এসেছিল ৯৫ টন।
বাজার মহলের মতে, আমদানি কম হওয়ায় এ খাতে ভারতের খরচ কিছুটা কমেছে ঠিকই। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া দাম থাকলে এবং ডলারের সাপেক্ষে রুপির দর না কমলে তা খুব বেশি হেরফের হবে না। ফলে মিলবে না সোনার আমদানি কমার সুফল। গত বছরের শুরু থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তার ফলে অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া আশঙ্কা বুঝতে সোনার দিকে ঝুঁকেছিলেন মানুষ। কিন্তু নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে হিসাব-নিকাশ বদলে যায়। তাই সোনা থেকে অর্থ তুলে বন্ডে বিনিয়োগ সরিয়ে নেন বিনিয়োগকারীরা। এখন ঘটছে ঠিক তার উল্টো।
টানা কয়েক মাস নীতি সুদহার বাড়ার কারণে বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে নীতি সুদহার বাড়লেও সেই বৃদ্ধির গতি কমতে পারে বলে ধারণা বিনিয়োগকারীদের। সে কারণে আবার তাঁরা বন্ড থেকে স্বর্ণের দিকে ফিরছেন। এর জেরে ধাতুটির চাহিদা ও দাম বাড়ছে তরতরিয়ে। আবার সোনা অনেক ক্ষেত্রেই মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের অনেক দেশ ডলারের পাশপাশি রিজার্ভ হিসেবে সোনা সংরক্ষণ করে। ব্যবসায়ীরাও অনেক সময় লোকসান ঠেকাতে সোনা মজুদ করেন। এ কারণে এ মূল্যবান ধাতুর দাম বাড়ে।
বিটকয়েন সোনার বিকল্প নয়:
গত কয়েক বছর ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে বিটকয়েনের যে উত্থান হয়েছে। অনেকেই মনে করছিলেন, বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে বিটকয়েন সোনার জায়গা করে নেবে। ২০২০ সালে মার্কিন ডলারের দরপতন হওয়ায় বিটকয়েনের দাম অনেকটা বেড়ে যায়।
দ্য ইকোনমিস্টের তথ্য অনুসারে, গত পাঁচ বছরে সোনার দৈনিক দাম কম ও বাড়ার হার ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের মতো। অথচ ২০২২ সালে ব্যাপক দরপতনের আগে বিটকয়েনের দৈনিক দাম কম ও বাড়ার হার ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ বিটকয়েন বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে অনেক অস্থিতিশীল।
কারণ, হিসেবে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিটকয়েনের কোনো মৌল ভিত্তি নেই। বাজারে বুদ্বুদ তৈরি হলে তা খুব সহজেই ফেটে যাবে। ২০২২ সালে মার্কিন ডলারের দর বাড়লে বিটকয়েনের দামে রীতিমতো ধস নামে। তাতে অনেকেই পুঁজি হারান। এজন্য অনেকেই মনে করেন, বিটকয়েন কখনো সোনার বিকল্প হতে পারে না।