বিদেশি তারকাদের ভিড়ে ফেভারিটের তকমা মেখেছিল রংপুর রাইডার্স। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল ফরচুন বরিশালকে হারানোর আত্মবিশ্বাস। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও ছিল তাদের হাতেই। কিন্তু মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বের কাছে ফিকে হয়ে গেল সব আত্মবিশ্বাস। ফেভারিট রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালে পা রেখেছে মাশরাফীর সিলেট স্ট্রাইকার্স।
বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ১৯ রানে হারিয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। এর আগে প্রথম কোয়ালিফায়ার জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি চলতি আসরের ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার মুখোমুখি হবে সিলেট স্ট্রাইকার্স।
মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খেলেও মাঝপথে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রংপুর। রনি তালুকদার, নিকোলাস পুরান ও নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে সমীকরণটাও তাদের পক্ষেই ছিল।
কিন্তু এখানেই সিলেট অধিনায়ক মাশরাফী বোলারদের নিয়ে অনেকটা বাজিমাত করেন। রংপুরের সমীকরণ যখন শেষ তিন ওভারে ৩৩ রানের তখন তানজিম হাসান সাকিবকে পাঠান মাশরাফী। ওভারের প্রথম বলেই তানজিম ফেরান নুরুলকে। ৩৩ (২৪) রান করা নুরুলকে হারানোর চাপের মাঝেই আরেকটি ধাক্কা খায় রংপুর। তানজিমের ওভারেই আরেক সেট ব্যাটার রনি তালুকদার রান আউট হয়ে বিদায় নেন ৬৬ রানে।
১৮তম ওভারটিতেই মূলত খেলার মোড় ঘুরে যায়। পরের ওভারে মাশরাফী পাঠান লুক উডকে। তিনিও করেন দুর্দান্ত বোলিং। ১৯তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে তুলে দুটি উইকেট। তিনি তুলে নেন ব্রাভো ও মাহেদির উইকেট।
ফলে শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ২৮ রানের। রুবেলের করা ওই ওভারে দাসুন শানাকা পর পর দুটি বাউন্ডারি মারলেও জয়ের নাগাল স্পর্শ করতে পারেনু রংপুর। রুবেলের শেষ ইয়র্কারে ভাঙে দাসুন শানাকার স্টাম্প। সেই সঙ্গে বিদায় নিশ্চিত হয় রংপুরের। ৮ উইকেটে ১৬৩ রানে থেমে যায় সোহানের রংপুর রাইডার্স। বল হাতে ৩৪ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে সিলেটের সেরা বোলার লুক উড। সমান দুটি করে নিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব ও রুবেল হোসেন।
এর আগে রংপুরের বিপক্ষে টসে হেরে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৭ উইকেটে ১৮২ রান তোলে সিলেট স্ট্রাইকার্স। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হেরে প্রথম কোয়ালিফায়ারে সুযোগ হাতছাড়া করেছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। চলতি বিপিএলের ফাইনালে যেতে আজই শেষ সুযোগ ছিল তাদের সামনে। সেই সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল।
মিরপুর শেরেবাংলায় স্টেডিয়ামে আজ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে তৌহিদেই ভরসা রাখে সিলেট। দলের ভরসার মান রেখেছেন দুজন। ওপেনিংয়ে দুজন থিতু হয়ে গড়েছেন ৬৫ রানের জুটি। তবে রানের গতি ছিল মন্থর।
নবম ওভারে এই জুটি ভাঙেন মাহেদি হাসান। ফিরিয়ে দেন শান্তকে। ব্রাভোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে শান্ত ৩০ বলে ৪০ রান করেন। পরের ওভারে ফেরেন আরেক ওপেনার তৌহিদ। তার ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ২৫ রান।
রানের গতি মন্থর হওয়ায় ওয়ানডাউনেই নেমে যান মাশরাফী। তাকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ১৬ রানে সাজঘরে ফেরেন জাকির হাসান। এরপর রায়ার্ন বার্লকে সঙ্গে নিয়ে রানের গতি বাড়ানোর লড়াই করেন মাশরাফী। কিন্তু লড়াই বেশিদূর জমেনি। ব্যক্তিগত ২৮ রানে মাশরাফীকে থামান ব্রাভো। দায়িত্ব নিতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। ৬ রানে তিনি হাসান মাহমুদের ফাঁদে পড়ে।
দুই তারকা ফেরার পর শেষ দিকে পেরেরার ২১ রান আর জর্জের ২১ রানে চড়ে লড়াই করার পুঁজি পায় সিলেট। বল হাতে রংপুরের পক্ষে ২৫ রান দিয়ে এক উইকেট নেন মাহেদি হাসান। সমান দুই উইকেট করে নেন দাসুন শানাকা ও ব্রাভো।