২০২১ সালের আগস্টে ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তালেবানরা। এরপর থেকেই দেশটির পটভূমি পরিবর্তন হতে থাকে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে নারীদের ক্ষেত্রে। বর্তমানে নারী নিপীড়নে বিশ্বের শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে আফগানিস্তান। খোদ জাতিসংঘ থেকে এ দাবি করা হচ্ছে। ফরাসি সংবাদ সংস্থা এপির বরাতে আজ বুধবার (৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
ভারতীয় গণমাধ্যমটি জানায়, আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকেই নারী নিপীড়নে বিশ্বের শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে তারা। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশটির নারীরা।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে একটি বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এতে বলা হয়, আফগানিস্তানের নতুন শাসকরা প্রায়শ নতুন নিয়ম আরোপ করছে। এসব নিয়মের মূল উদ্দেশে, দেশটির বেশিরভাগ মহিলা ও মেয়েকে কার্যকরভাবে তাদের বাড়িতে আটকে রাখা।
প্রতিবেদনে হিন্দুস্তান টাইমস আরও জানায়, দুই দশক যুদ্ধের পর ক্ষমতায় আসে তালেবানরা। এরপর থেকে আধুনিক অনেক বিষয় বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। তবে, সেই পথে হাঁটছে না তারা। শিক্ষাঙ্গনে নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারীদের পড়ালেখায় সর্বোচ্চ ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত বেধে দিয়েছে তালেবান সরকার। জনসমাগম এলাকা যেমন পার্ক ও জিমে নারীদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় নারীদের কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি পায়ের পাতা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে চলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি এবং আফগানিস্তানে মিশনের প্রধান রোজা ওতুনবায়েভা বলেছেন, ‘তালেবানের অধীনে নারী অধিকারের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়নকারী দেশ আফগানিস্তান। আফগান নারীদের জনবিচ্ছিন্ন করতে তাদের পদ্ধতি, ইচ্ছা ও নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা দুঃখজনক।’
নারীদের শিক্ষা এবং এনজিও কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে তালেবানদের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। কিন্তু, তালেবানরা পিছু হটানোর কোনো লক্ষণ দেখায়নি। তাদের দাবি, ঠিকমতো মাথার স্কার্ফ অথবা হিজাব না পরায় এই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করা নিয়ে তালেবান সরকার জানায়, নারীদের এমন কিছু বিষয় পড়ানো হচ্ছে যেগুলো আফগান ও ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
আফগানিস্তানে মিশনের প্রধান রোজা ওতুনবায়েভা বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক ও মানবিক সমস্যায় ভোগা দেশটি তাদের অর্ধেক জনসংখ্যাকে ঘরে বন্দি করে রেখে নিজেদেরই ক্ষতি করছে। তাদের নিয়মনীতির ফলে, দেশটির নাগরিকেরা বাকি বিশ্ব থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হবে। গোটা একটি প্রজন্ম এই সমস্যায় ভুগবে।’
জাতিসংঘ থেকে আরও বলা হয়, তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানে নারী বৈষম্যের আদেশ রেকর্ড করা হয়েছে। নারীদের বাড়ির সীমানার বাইরে ভ্রমণ বা কাজ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকি জনসাধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্ত স্তর থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের নারীদের জন্য বিশেষ প্রতিনিধি অ্যালিসন ডেভিডিয়ান বলেছেন, ‘তালেবানরা তাদের নিজেদের নাগরিকদের ওপর যে ক্ষতি করছে তার প্রভাব নারী ও মেয়েদের পড়ছে।’
বিষয়টি নিয়ে তালেবান সরকারের মন্তব্য চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, আফগানিস্তানের এক কোটি ১৬ লাখ নারীর মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এমনকি নারীদের এনজিওতে কাজ নিষিদ্ধের পর থেকে দেশটিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা অনেকাংশে কমে গেছে।