মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের একটি গ্রামে দেশটির সামরিক জান্তার বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৩৩ জন নিহত হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত ছায়া জাতীয় ঐক্য সরকারের মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী অং মিও মিনকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।
গত মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দেশটির মধ্য সাগাইং অঞ্চলের কানবালু শহরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এটি দুই বছর আগে সেনা অভ্যুত্থানে জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে এ পর্যন্ত চালানো সবচেয়ে মারাত্মক হামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সিএনএনের তথ্যমতে, হামলায় অন্তত ২০ শিশু নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কিয়ুনহলা নামের একটি সংগঠনের কর্মীরা, যারা ঘটনাস্থলে ছিল।
অং মিও মিন সিএনএনকে বলেন, যদিও সেখানে পরে আর কোনো হামলা চালানো হয়নি, তবে সামরিক বিমানগুলো শহরের ওপর দিয়ে উড়তে থাকে এবং উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকদের হামলা কবলিত এলাকায় পৌঁছাতে বাধা দেয়।
সাগাইং অঞ্চল দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালেয়ের কাছে অবস্থিত। সেখানে কয়েক মাস ধরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই হয়েছে এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গত মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, তিনি এই মারাত্মক বিমান হামলায় আতঙ্কিত হয়েছেন, যার শিকার হয়েছে স্কুলছাত্ররাও। এ হামলায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শেয়ার করা ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ডজনেরও বেশি পোড়া ও বিকৃত মরদেহ, বিধ্বস্ত ভবন, পোড়া মোটরসাইকেল ও বিস্তীর্ণ এলাকায় ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধারকারীরা সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে ছবিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় প্রতিরোধ আন্দোলনের একটি প্রশাসনিক কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল ওই হামলার লক্ষ্যবস্তু। বিমান হামলার পর ঘটনাস্থলের ভিডিও ও ছবিতে ভবনটির শুধু পোড়া কাঠামোটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এর আগে প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর এই বিমান হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছিল বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সাগাইং অঞ্চলের বাসিন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি বার্মিজ, রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ) ও ইরাবতী নিউজ পোর্টাল জানিয়েছে, বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিকসহ ৫০ থেকে ১০০ জন নিহত হয়েছে। তবে, নিহতের বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। এমনকি, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণের জন্য সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংস হামলা চালানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তাদের।