আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারতের ওড়িষ্যায় তিন ট্রেনের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। এই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি প্রায় তিনশ। আহত হয়েছেন অনেকে। নিহতদের মধ্যে প্রায় একশর পরিচয় মেলেনি এখনও। আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
গত শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে দুটি যাত্রীবাহী ও একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। ভারতের ইতিহাসের শতাব্দীর বড় ট্রেন দুর্ঘটনায় এক হাজারের বেশি আহত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। অনেকে পরিবার এখনও তাদের ভালোবাসার নিখোঁজ মানুষকে খুঁজছেন।
প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, ব্যাঙ্গালুরু থেকে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। লাইনচ্যুত হয়। এ সময় সেখানে থাকা অন্য একটি রেললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে লাইনচ্যুত ট্রেনটির কয়েকটি বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় তৃতীয় লাইনে পড়ে ট্রেনের আরও কয়েকটি বগি। সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি যাত্রীবাহী ট্রেন।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ছিল যাত্রীতে ঠাসা। এগুলোতে তিন হাজারের বেশি যাত্রী ছিল।
ট্রেন দুর্ঘটনার পর পরিবারের নিখোঁজ সদস্যদের সন্ধানে তাদের স্বজনেরা ওড়িষ্যা ও অন্যান্য রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন। কিন্তু, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মরদেহ শনাক্ত করা একটি বাস্তব চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে।
ওড়িষ্যার বালাসোর ডিসট্রিক্ট হাসপাতালে যান মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন। এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন এই বৃদ্ধের নাতি। তবে, এখনও নাতির মরদেহ নিজেদের বলে দাবি করতে পারেননি।
দুর্ঘটনার শিকার করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে বাবার সঙ্গে সফর করছিলেন ১৬ বছর বয়সী তাসফির আনসারি ও তৌসিফ ১৩। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন সেই বাবা।
হাসপাতালের দেয়ালে ঝুলছে অনেক নিখোঁজের ছবি। সেখানে দেখা মিলে তাসফির ও তৌসিফের ছবি। সেখানে তাসফিরের ছবি রয়েছে ২০ নম্বরে ও তৌসিফের ১৬৯ নম্বরে। এই ছবি দেখেই তাদের শনাক্ত করে তাদের পরিবার। দুর্ঘটনায় ওই দুই ভাইয়ের চেহারা অনেকাংশে বিকৃতি হয়ে পড়ে। তবে, তাদের দাদা দুই ভাইকে শনাক্ত করেন।
ছেলের মরদেহ খুঁজতে রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন নিজামুদ্দিন। রাজধানীর চার হাসপাতালে প্রায় ১০০ মরদেহ রয়েছে, যেগুলোর পরিচয় এখনও মেলেনি। তবে, যাওয়ার আগেই নিজামুদ্দিনকে থামিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। কারণ, অন্য একটি পরিবার তাসফিরের মরদেহ নিজেদের নিখোঁজ স্বজনের বলে দাবি করছে। নিজামুদ্দিন বিবিসিকে বলেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? এর মানে দাঁড়ায়, আমি আমার নাতিকে চিনতে পারছি না।’
নিজামুদ্দিনকে ভুবনেশ্বরের নাগরিক আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। কারণ, মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।
ভুবনেশ্বর পৌর কমিশনার বিজয় অমৃতা কুলাঙ্গে বিবিসিকে বলেন, ‘ছবির ডাটাবেজ ধরে গেলে সেখানে শনাক্তের অপেক্ষায় পড়ে আছে অনেক মরদেহ। এগুলোতে এখন পচনও ধরেছে।’
বিজয় অমৃতা কুলাঙ্গে বলেন, ‘কোনো মরদেহ একাধিক পরিবার নিজেদের বলে দাবি করলে সেখানে পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপরও যেসব মরদেহ শনাক্ত হবে না, সেগুলো হাসপাতালের মর্গে আগামী ১০ দিন রাখা হবে।’
এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই সময় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, গত শনিবার উদ্ধারকাজ শেষ হয় এবং রেললাইনগুলো থেকে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা হয়। ইতোমধ্যে একটি লাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। অন্যগুলো আগামী বুধবার নাগাদ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ট্রেন নেটওয়ার্ক রয়েছে ভারতে। প্রতিদিন ১২ হাজারেরও বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন চালায় দেশটি, যা দিয়ে বছরে কয়েক বিলিয়ন যাত্রী সারা দেশে যাতায়াত করে। তবে, দেশটির রেলওয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন।
দুর্ঘটনার সময়ে সাধারণত ভারতের ট্রেনগুলো যাত্রীতে ভর্তি থাকে। স্কুল বন্ধ থাকায় ভ্রমণে বের হয় অনেকে।
ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮১ সালে। ওই সময় বিহারের একটি ব্রিজ থেকে লাইনচ্যুত হয়ে যাত্রীভর্তি একটি ট্রেন নদীতে পরে যায়। এতে ৮০০ মতো মানুষ প্রাণ হারান।